তারাবিহর নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন হারুন অর রশিদ। বাসায় ছিলেন স্ত্রী হনুফা আক্তার। নামাজ শেষে বাসায় ফিরে হারুন দেখতে পান, খাটের ওপর পড়ে আছে স্ত্রীর লাশ। বাম গাল ও থুতনির নিচে নখের একাধিক আঁচড়। মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল রক্তমিশ্রিত লালা।
স্ত্রীর লাশ দেখে চিৎকার শুরু করেন হারুন। শুনে আশপাশের লোকজন এসে ছুটে আসেন তাঁদের বাসায়। পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে। লাশের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় শার্টের একটি বোতাম ও হাত গ্লাভসের অংশ বিশেষ। সেই বোতামের সূত্র ধরে খুনিকে শনাক্ত করে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার রাতে, ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, হারুন অর রশিদের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে। হনুফাকে বিয়ের পর তিনি বিরুলিয়া এলাকায় ঘরজামাই হিসেবে থাকেন।
স্ত্রী হত্যার ঘটনায় হারুন সাভার থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার দিনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে হনুফার ভাই মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ আলী বোনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ শুক্রবার আদালতে জবানবন্দিতে একই স্বীকারোক্তি দেন তিনি।
তদন্ত ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দির সূত্র ধরে পুলিশ বলছে, জমি নিয়ে হনুফা ও মোহাম্মদ আলীর মধ্যে বিরোধ ছিল। বিরোধের জেরে বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মোহাম্মদ আলী। পরে ভারতীয় ধারাবাহিক ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখে হাতে গ্লাভস পরে শ্বাসরোধে বোনকে হত্যা করেন তিনি, পুলিশ যেন তাঁর আঙুলের ছাপ মেলাতে না পারে।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুলাহিল কাফী বলেন, মরদেহের পাশে পাওয়া শার্টের বোতাম ও গ্লাভসের অংশকে সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করা হয়। হনুফার স্বামীকেও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছিল। একপর্যায়ে ওই বোতামের সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর একটি শার্টের বোতাম মিলে যায়। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১২ বছর আগে মোহাম্মদ আলী তাঁর বাবার ২০ বিঘা জমি জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে করে নেন। পরে তাঁর বাবা মামলা করে সেই জমি ফেরত পান। ওই জমি মেয়ে হনুফাকে লিখে দেন তিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর মোহাম্মদ আলী তাঁর বোন হনুফাকে অর্ধেক জমি ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এই জমি নিয়ে দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোহাম্মদ আলী আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার ১০-১২ দিন আগে তাঁর বোন হনুফার সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। হনুফার স্বামী তাঁকে ও তাঁর ছেলেমেয়েকে মারধর করেন। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেন। এরপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে মোহাম্মদ আলী বলেন, ঘটনার দিন বাসায় কেউ ছিল না। তিনি বাসায় ঢুকে হনুফার মুখ চেপে ধরে খাটের ওপর ফেলে দেন। এরপর বালিশ দিয়ে তাঁর মুখ চেপে ধরেন। তখন হনুফা তাঁর শার্টের একটি বোতাম টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।