ফুটপাতের বই বিক্রেতা এখন ২৩ হাজার কোটি টাকার মালিক

0
181
বর্তমানে দুবাই প্রবাসী ভারতীয় নাগরিক রিজওয়ান সজন এক সময় বেশ গরিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিপুল ধনসম্পদের মালিক, ছবি: গালফ নিউজ

ভারতীয় নাগরিক রিজওয়ান সজন একসময় বেশ গরিব ছিলেন। বয়স যখন মাত্র ১৬ বছর তখন তাঁর বাবা মারা যান। তিন ভাই–বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তাই জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর ওপর। সংসারের খরচ জোগাতে তিনি রাস্তায়–ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের বই ও স্টেশনারি পণ্য ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে দানিউব নামের কোম্পানি প্রতিষ্ঠার আগপর্যন্ত তিনি এই ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলেন। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত আয়ের জন্য ‘ডেলিভারি বয়’ হিসেবেও এখানে–ওখানে দুধ সরবরাহের কাজ করতেন।

রিজওয়ানের বয়স এখন ৫৫ বছর। থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে। বর্তমানে তিনি সেই দেশে ব্যবসারত ভারতীয় ধনীদের মধ্যে অন্যতম একজন। ‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়া এই বিলিয়নিয়ার (শতকোটিপতি) এখন ১৮ হাজার কোটি রুপি মূল্যের ধনসম্পদের মালিক, যা ২২৩ কোটি মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশের ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সমান।

দারিদ্র্যের মধ্যে কাটানো দিনগুলো সম্পর্ক রিজওয়ান সজন বলেন, ‘বিষয়টা কঠিন ছিল, সত্যিই কঠিন। আমার বাবা একটি স্টিল ফ্যাক্টরিতে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। মাসে বেতন পেতেন ৭ হাজার রুপি। তাতে সংসার চালানো ও আমাদের স্কুলের ফি পরিশোধ করা কষ্টকর ছিল। পরিস্থিতি অনেকটা দিন এনে দিন খাওয়ার মতোই ছিল। সম্প্রতি গালফ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি এসব কথা বলেন।

কিন্তু রিজওয়ান সজন হাল ছেড়ে দেননি। সত্যিকার অর্থেই তিনি লড়াই চালিয়ে যান, কঠোর পরিশ্রম করেন। এর সুফলও তিনি পান। একসময় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। আর্থিক সচ্ছলতা আসে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৯৩ সালে তিনি দুবাইয়ে দানিউব গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যস, এর পরই তরতর করে তাঁর ধনসম্পদ বাড়তে থাকে। তার বদৌলতে ২০১৯ সালে দানিউব গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার, মানে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা বর্তমান মূল্যে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে)।

দানিউব গ্রুপের মালিকানায় এখন একটি করে নির্মাণ উপকরণ কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট ফার্ম বা আবাসনপ্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো কোম্পানিসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।

রিজওয়ান সজনের আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনে অবশ্য তাঁর চাচা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনিই ১৯৮১ সালে রিজওয়ানের বয়স যখন ১৮ বছর তখন তাঁকে কুয়েতে চাকরি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই দেশে গিয়ে রিজওয়ান একটি কোম্পানিতে ১৫০ কুয়েতি দিনার মাসিক বেতনে সেলস ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেন, যা ভারতের ১৮ হাজার রুপি ও বাংলাদেশের সাড়ে ২৩ হাজার টাকার মতো।

আট বছর কাজ করার পর রিজওয়ান ওই কোম্পানির সেলস ম্যানেজার, অর্থাৎ বিক্রয় ব্যবস্থাপক হন। কিন্তু এরই মধ্যে ১৯৯০ সালে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কুয়েত আক্রমণ করে বসেন। শহরটি বলতে গেলে ধ্বংসই করে দেন সাদ্দাম। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তার পশ্চিমা মিত্ররা সাদ্দাম তথা ইরাক আক্রমণ করে, যা উপসাগরীয় যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধের পরিস্থিতিতে রিজওয়ান মুম্বাই ফিরে আসেন এবং চাকরি খুঁজতে শুরু করেন। এরপর তিনি দুবাইয় একটি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানে চাকরি পান। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসায় দালালি তথা মধ্যস্থতা করত। একদিন রিজওয়ান চাকরি ছেড়ে নিজেই বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ট্রেডিং কোম্পানি, অর্থাৎ নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেন। গঠন করেন দানিউব গ্রুপ। বদৌলতে এই গ্রুপের মালিক রিজওয়ান সজন এখন দুবাইয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি। সূত্র: ডিএনএ ইন্ডিয়া ডট কম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.