এক সপ্তাহ আগেই নৌকা সাজানোর কাজ শেষ করেছিলেন খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মৌয়ালেরা। তাঁরা ভেবেছিলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও মধু সংগ্রহের জন্য ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে যেতে পারবেন। তবে সেদিন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের অন্যান্য অঞ্চলের মৌয়ালেরা অনুমতি পেলেও দাপ্তরিক জটিলতার কারণে কয়রার মৌয়ালেরা অনুমতি পাননি। অবশেষে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হওয়ার তিন দিন পর আজ মঙ্গলবার সকালে কয়রার মৌয়ালেরা সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে মৌয়ালদের হাতে মধু সংগ্রহের অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া হয়েছে। দেরিতে হলেও অনুমতি পেয়ে কয়রার মৌয়াল পরিবারগুলোতে স্বস্তি ফিরেছে। অনুমতি পেয়েই সকাল থেকে দল বেঁধে কয়রার চার শতাধিক মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন।
সুন্দরবনসংলগ্ন ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মৌয়াল সদর উদ্দীন শেখ বলেন, ৯ জনের একটি বহর নিয়ে বনে যেতে পাসের (অনুমতিপত্র) জন্য এক মাস আগে বন কর্মকর্তার কাছে আবেদন জমা দিয়েছিলেন। পাস পেতে দলবল নিয়ে সেই ১ এপ্রিল থেকে টানা তিন দিন ফরেস্ট স্টেশনে ঘুরেছেন। অবশেষে আজ সকালে পাস হাতে পেয়েছেন।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে তিনি নৌকা প্রস্তুত করে বসেছিলেন। ১৫ দিন সুন্দরবনে থাকবেন বলে বাজার-সদাইও করেছিলেন। তবে রোদে পড়ে থাকায় অনেক শাকসবজি শুকিয়ে গেছে। আবার নতুন করে কিছু শাকসবজি কিনতে হবে। এরপরও অনুমতিপত্র পাওয়ায় তাঁদের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
বিলম্বে অনুমতিপত্র দেওয়ার বিষয়ে কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় প্লেন, গত দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মৌয়ালদের আবেদনপত্র রেঞ্জ অফিস থেকে ছাড় করাতে একটু বিলম্ব হয়েছে। তবে আজ কাশিয়াবাদ স্টেশন থেকে ৫০টি নৌকার পাস দেওয়া হয়েছে। প্রতি কুইন্টাল মধুর জন্য ১ হাজার ৬০০ টাকা ও মোমের জন্য ২ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি নৌকায় ১৫ দিনের জন্য মধু আহরণের পাস দেওয়া হয়েছে।
মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি দলে ৭ থেকে ৯ জন সদস্য থাকেন। প্রথম পর্যায়ে তাঁরা ১৫ দিন সুন্দরবনে অবস্থান করে মধু ও মোম সংগ্রহ করে ফিরে আসবেন। পরে আবার সুন্দরবনে যাবেন। এভাবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত টানা সুন্দরবন থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করা হবে।
তবে আশানুরূপ মধু পাওয়া নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন মৌয়ালেরা। উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর মাছ ও কাঁকড়া শিকারের আড়ালে প্রচুর বনজীবী সুন্দরবনে থেকে আগেভাগে চোরাইভাবে মধু কেটেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার মধু অনেক কম পাওয়া যেতে পারে।
কয়রার মৌয়াল মালেক শিকারি বলেন, ‘আমি মহাজনের থেকে টাকা নিয়ে আটজনের একটি বহর নিয়ে বনে যাচ্ছি। বেশি মধু না পেলে চালান মার যাবে। তখন ঋণের বোঝা টেনে বেড়াতি হবে। এলাকায় কাজ-কাম না থাকায় বাধ্য হয়ে এ বছর মধু সংগ্রহে যাচ্ছি।’
খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক (ডিএফও) আবু নাসের মোহাম্মাদ মহসীন হোসেন বলেন, প্রতিটি নৌকায় ১০-১২ জন বাওয়ালি অবস্থান করতে পারবেন। একজন বাওয়ালি ১৫ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ কেজি মধু ও ১৫ কেজি মোম আহরণ করতে পারবেন। ১৫ দিনের বেশি কোনো বাওয়ালি সুন্দরবনে অবস্থান করতে পারবেন না। এ বছর সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগে ৩ হাজার কুইন্টাল মধু ও ৮০০ কুইন্টাল মোম পাওয়ার আশা করছে বন বিভাগ