‘বাজারে যেখানে ১ লিটার তেলের দাম ১৯০ টাকা, সেখানে ৭টি পণ্য মাত্র ১০ টাকায় পেয়েছি। এখানে এসে মনে হলো বাপ-দাদার আমলের মতো অল্প টাকায় আমরা বাজার থেকেই পণ্য নিচ্ছি।’ কথাগুলো মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামের নাছিমা বেগমের।
৩৫ বছর বয়সী এ নারী শুক্রবার এসেছিলেন একই উপজেলার কামারখাড়া বাজারে। সেখানে ‘১০ টাকায় ইফতার’ কর্মসূচি পালন করে বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশন। নামমাত্র মূল্যে এখান থেকে ২১০ জন কিনে নিয়ে যান এক লিটার সয়াবিন তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। নিম্ন আয়ের লোকজনের জন্য এ উদ্যোগ নেয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।
কামারখাড়ার ওই কর্মসূচি থেকে একই দিন এসব পণ্য কেনেন মুন্সীগঞ্জ সদরের পূর্বরাখি গ্রামের আয়শা বেগম (৪৫)। ১০ টাকায় যেখানে বাজারের একটি ব্যাগ মেলে, ওই টাকায় ব্যাগভর্তি পণ্য পেয়ে খুশি ধরছিল না আয়শার মনে। তিনি বলেন, রমজান শুরুর আগের দিন এক বাড়ি থেকে কিছু ইফতারসামগ্রী পেয়েছিলেন। সদ্য বিবাহিতা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন সেই ইফতার। সঙ্গে আরও এক হাজার টাকা ঋণ করে কেনা ইফতারও পাঠাতে হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন তাঁকে ইফতার সারতে হয় পানি আর মুড়ি দিয়ে। তাঁর আশা, ১০ টাকায় বিপুল পরিমাণ ইফতারসামগ্রী পেয়ে বাকি রোজাগুলো ভালোয় কাটবে।
১০ টাকায় এসব বিক্রির কারণ জানান বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশনের সদস্য রিয়া মনি। তিনি বলেন, ‘চাইলে ইফতারসামগ্রী বিনামূল্যে দেওয়া যেতো। তবে আমরা চাই, স্বল্পমূল্যে হলেও দরিদ্র মানুষেরা যেন কিনে নেন। এতে তাঁদের আত্মসম্মান অক্ষুণ্ন থাকবে, পাশাপাশি বাজার থেকে কেনার অনুভূতিও বজায় থাকবে।’ এ কর্মসূচিতে থেকে ২১০টি পরিবার বাজার করতে পারে বলেও জানান তিনি। আগের বছর ১০ টাকায় গরুর মাংস ও ইফতার বাজার দিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসে এ সংগঠনটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শামিয়ানার নিচে বসানো অস্থায়ী এই বাজারে আলাদা আলাদা স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। অন্য সব বাজারের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ পছন্দমতো পণ্য সংগ্রহ করছেন।
রাউৎভোগ এলাকা থেকে আসা রোকসানা বেগম (৬০) বলেন, ‘পাশের বাড়ির একজন ছোলা-মুড়ি দিছিল। পাঁচ রোজায় সব শেষ হয়ে গেছে। পরে আর কিইন্যা খাইতে পারি নাই। এহন ১০ টাকা দিয়া কতো কিছু কিনলাম। যা দিয়া বাকি রমজানগুলো কাটায়া দিতে পারমু।’
একই রকম মন্তব্য করেন মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা লুৎফা বেগম, লাবণী আক্তার, খোদেজা বেগমসহ অন্যরাও।
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, ‘বাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে এ অস্থায়ী বাজারের আয়োজন করেছি। সংগঠনের সদস্যদের দান ও মাসিক চাঁদার টাকায় এটি পরিচালিত হচ্ছে।’ আরও বড় পরিসরে কিছু করার পরিকল্পনা থাকলেও আর্থিক সংকটের কারণে কিছুটা সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। রিয়াদের আশা, এর মাধ্যমে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে এগিয়ে আসবেন।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো এই বাজার থেকে দুই শতাধিক মানুষ সহায়তা পেয়েছেন। আমরা অসহায় মানুষের আগ্রহ ও তৃপ্তির হাসি দেখেই আনন্দিত।’