সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রথম আলো এবং একাত্তর টেলিভিশনের তথ্যের জন্য সিআইডি তাঁকে (প্রথম আলোকে সাংবাদিক শামসুজ্জামান) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে আরও মামলা হয়েছে, সেসব মামলায় তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তখন সাংবাদিকেরা জানতে চান কয়টি মামলা হয়েছে? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ,‘এখন পর্যন্ত দুই-তিনটির খবর জানি, আরও মামলা হচ্ছে, আমরা শুনছি। এখনো আমাদের কাছে আসেনি।’
তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন যদি কেউ ভুল করে থাকে, সেটির মামলা হবে, বিচারের আওতায় আসবে। কিন্তু যে পদ্ধতির ভেতর দিয়ে তাঁকে (সাংবাদিক শামসুজ্জামান) গ্রেপ্তার করা হলো, তাতে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমার ভয়ের কারণ আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি ভয়ের মধ্যে থাকবেন কেন? আপনি তো মিথ্যা তথ্য দেননি, আপনি তো বিভ্রান্তিকর নিউজ দেননি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সংবাদ করেননি। কাজেই আপনি ভয়ে থাকবেন কেন, আপনি নির্ভয়ে চলবেন।’
গতকাল বুধবার ভোর চারটার দিকে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের আমবাগান এলাকায় সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে সিআইডির সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে আসা হয়। এরপর ২০ ঘণ্টা ধরে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সিআইডির পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি। তাঁকে তুলে আনার পর জানা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। এর ২৪ ঘণ্টার মাথায় একই অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে রমনা থানায় একই আইনে আরেকটি মামলা হয়। দ্বিতীয় মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়। তবে পুলিশ দাবি করছে, শামসুজ্জামানকে বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকায় অভিযান চালিয়ে কয়েক ঘণ্টা আগে রমনা থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ সকালে আদালতে পাঠানো পুলিশ প্রতিবেদনে শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারে এই বর্ণনা দেওয়া হয়। যদিও তুলে নেওয়ার ২০ ঘণ্টা পর বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৩৬ মিনিটে শামসুজ্জামানের মুঠোফোন নম্বর থেকে প্রথম আলোর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মীর কাছে কল আসে। ফোনে শামসুজ্জামান বলেন, তাঁকে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের (বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র) সামনে সিআইডি নামিয়ে দিচ্ছে। এরপর শামসুজ্জামান বলেন, সেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আরেকটি দল আছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে। কল চালু থাকা অবস্থায় শামসুজ্জামান কাউকে বলছিলেন, ‘ভাই আমাকে আরেকটু সামনে নামিয়ে দিয়ে আসেন না’। এরপর তাঁর মুঠোফোন নম্বর থেকে একটি অসম্পূর্ণ খুদে বার্তা আসে। শামসুজ্জামানের এই কল পাওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় প্রথম আলোর দুজন কর্মী সেখানে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে শামসুজ্জামানকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোনে কল করা হলে তা ধরা হয়নি। পরে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এই কলের ১০ ঘণ্টা পর পুলিশ আজ সকাল ১০টার পর শামসুজ্জামানকে আদালতে হাজির করে। আদালত তাঁর জামিন আবেদন বাতিল করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।