রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ ইফতার। ইফতার অর্থ ভঙ্গ করা বা সমাপ্ত করা। খুব সামান্য খাবারকে ইফতার বলে। সূর্যাস্তের পর প্রথম যে খাবার বা পানীয় মুখে নেয়ার দ্বারা রোজাকে সমাপ্ত করা হয়— তাই ইফতার। রোজার সূচনা হয় সাহরির মাধ্যমে। রোজাকে পূর্ণ করে ইফতার। সাহরির মতো ইফতারও রোজার গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
ইফতার রমজান মাসকে বিশেষভাবে বৈশিষ্টমণ্ডিত করেছে। রমজানের সন্ধ্যাগুলোকে অলংকৃত করে রাখে ইফতার ব্যবস্থাপনা। এটা ইফতারের প্রতি গুরুত্বের বহিঃপ্রকাশও বটে।
রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার পরিহারের মাধ্যমে সারাদিন ক্ষুধা ও তৃষ্ণার যন্ত্রণা ভোগ করে। ইফতার সে যন্ত্রণা দূর করে রোজাদারের জন্য পরম আনন্দ বয়ে আনে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ হচ্ছে যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তিরমিজি ৭৬৬
রাসুল (সা.) ইফতারের সময় হওয়া মাত্র খুব দ্রুত ইফতার করে ফেলতেন। সাহাবায়ে কেরামকেও দ্রুত ইফতার করার নির্দেশ দিতেন। দ্রুত ইফতার করাই কল্যাণকর। এটা ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। কেননা ইহুদি-খ্রিস্টানরা বিলম্বে ইফতার করে। বিলম্বে ইফতার করলে তা ইহুদি খ্রিস্টানদের সাদৃশ্য হয়ে যাবে। তাই রাসুল (সা.) বিলম্বে ইফতার করতে নিষেধ করেছেন।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষ যতদিন পর্যন্ত সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে, ততদিন কল্যাণের সঙ্গে থাকবে। সহিহ বুখারি ২৮৫২
শরিয়তে ইফতারের জন্য নির্দিষ্ট কোনা খাবারকে অবধারিত করা হয়নি। যার যার খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী ইফতার করার সুযোগ রয়েছে। তবে খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নত। রাসুল (সা.) খেজুর দ্বারা ইফতার করা পছন্দ করতেন। খেজুর না থাকা অবস্থায় তিনি পানি দ্বারা ইফতার করতেন।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নামাজের পূর্বে তাজা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না থাকলে যেকোনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর তাও যদি না থাকত তা হলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। তিরমিজি ৬৯৬
রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে তখন সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। কারণ, খেজুরে রয়েছে বরকত। খেজুর না পেলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ তা পবিত্র। ইবনে মাজাহ ১৬৯৯
রমজান মাসে সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণের সময়টুকু খুবই মূল্যবান মুহূর্ত হিসেবে গণ্য। বিশেষ এই মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা রোজাদারের দোয়া কবুল করেন। এই সময়ে রোজাদার ব্যক্তি প্রচণ্ড ক্ষুধা ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ইফতারি সামনে নিয়ে আল্লাহ নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষা করেন। খাবার প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও রোজাদার ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের পূর্বে পানাহার থেকে বিরত থাকেন একমাত্র আল্লাহর ভয়ে। রোজাদারের মধ্যে এই যে একটি আনুগত্যের অবস্থা তৈরি হয়, একই সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত আবার আল্লাহর ভয়ে সংযমী, মহান আল্লাহ বান্দার এই অবস্থাকে ভীষণ পছন্দ করেন। তাই আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে বান্দার প্রার্থনা কবুল করেন এবং বান্দাদেরকে ব্যাপকভাবে ক্ষমা করেন।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৫৩
রাসুল (সা.) আরও বলেন, প্রতিটি ইফতারের সময় এবং প্রতি রাতে লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সুনানে ইবনে মাজাহ ১৬৪৩
ইফতারের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অনেকেই অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে। তারা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। তাই সকলের উচিৎ ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে ইফতারি সামনে রেখে আল্লাহ তায়ালার নিকট কল্যাণের দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।
রোজাদারকে ইফতার করানো অনেক পুণ্যের কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রোজাদারের প্রতিদানের সমান প্রতিদান দেওয়া হবে এবং রোজাদারের প্রতিদান থেকেও কোনো প্রতিদান কমানো হবে না। সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৪৬
আমাদের চারপাশে এমন অনেক অসহায় ও দরিদ্র মানুষ আছে যাদের ভাগ্যে প্রতিদিন সাহরি ও ইফতার জোটে না। মহিমান্বিত এই মাসে তাদের প্রতি খেয়াল রাখা, তাদের জন্য সাহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সাহরি ও ইফতার করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটা ইবাদতেরও অংশ বটে।