সিইসির প্রস্তাবে সাড়া দেবে না বিএনপি

0
136
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরে সংলাপ- এমনটিই বলছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবিত আলোচনা ও মতবিনিময় বিএনপির পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলীয় প্রধানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বিএনপি মহাসচিব। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল। সিইসির প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও আলোচনায় চিঠি পাঠানোর জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি।

গত ২৩ মার্চ বিএনপি মহাসচিবকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তারা বিএনপিকে সংলাপের জন্য নয়, অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার জন্য  চিঠি দিয়েছে।

সিইসির চিঠির বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা অথবা সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক মহাসচিবকে প্রেরিত পত্রটির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পত্রে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক না হলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সভা মনে করে, বর্তমানের মূল রাজনৈতিক সংকট নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা অথবা সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না এবং তা হবে অর্থহীন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয় এবং ইচ্ছা থাকলেও নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যেহেতু মূল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত আলোচনা ও মতবিনিময়ে সম্ভব নয়, সে-কারণে বিএনপি এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবন সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। অথচ সরকারের মন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতাদের ‘জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে এবং এত মানুষ লাইন দিয়ে ইফতার সামগ্রী কিনছেন প্রমাণ করে যে, তাদের আয় বেড়েছে’ উক্তি জনগণের সঙ্গে মশকরা ছাড়া আর কিছু নয়।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বারবার সরকারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান করলেও সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন। সরকারি দলের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ইতিমধ্যে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আগামী ১ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে গৃহীত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি  পালনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মঙ্গলবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সালাউদ্দিন আহমেদ, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।

সভায় রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের ই-মেইল সার্ভার হ্যাকারদের কবলে পড়ার সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া গত ২২ মার্চ সরকারের ভূমি দপ্তরে কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে র‌্যাব কর্তৃক তুলে নেওয়া এবং তার মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.