এক যুগ্ম সচিবের উপস্থিতিতে আটক হন জেসমিন: র‌্যাব

0
166
সংবাদ সম্মেলনের র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

একজন যুগ্ম সচিবের অভিযোগের ভিত্তিতে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব। সংস্থাটি বলছে, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত ওই যুগ্ম সচিবের নাম এনামুল হক। নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে র‌্যাব আটক করার সময়ও ওই যুগ্ম সচিব উপস্থিত ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে র‌্যাব জানিয়েছিল, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খন্দকার আল মঈন বলেন, যুগ্ম সচিব এনামুল হকের অভিযোগে তার উপস্থিতিতেই র‌্যাব নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে আটক করেছিল। পরে তিনি ‘অসুস্থ হয়ে পড়লে’ তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, যুগ্ম সচিবের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র প্রতারণা করে আসছিল। যুগ্ম সচিবের নাম ও পদবি ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার নাম করে বা কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ আদায় করছিল চক্রটি। এ বিষয়ে ২০২২ সালের মার্চ মাসে প্রথমে জিডি করেন এনামুল হক।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, জিডিতে যুগ্ম সচিব তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে যে প্রতারণা করা হচ্ছে সেই অভিযোগ করেন। একজন নারী তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা করছেন এমন অভিযোগে তিনি আদালতে মামলাও করেন।

অভিযোগকারী কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে চক্রটিকে ধরার চেষ্টা করছিলেন জানিয়ে মঈন খান বলেন, সর্বশেষ ১৯ ও ২০ মার্চ তার নাম ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে টাকা নেওয়ার তথ্য পান তিনি। প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পারেন, ওই ঘটনার সঙ্গে আল আমিন নামে এক ব্যক্তি যুক্ত। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছিলেন জেসমিন।

ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, গত ২২ মার্চ (বুধবার) এনামুল হক র‌্যাবের টহল টিমকে দেখতে পেয়ে অভিযোগ করেন। একটি ধর্তব্য অপরাধ হিসেবে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ জানাতেই পারেন তিনি। তখন এনামুল হকসহ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীকে আমরা শনাক্ত করতে সক্ষম হই।

তিনি আরও বলেন, এনামুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতে তার সম্মুখেই ভূমি অফিসে কর্মরত জেসমিনকে আমরা আটক করি। সেখানে দুজন সাক্ষীও ছিলেন। সাক্ষী ও এলাকার লোকজনের সামনে র‌্যাবের দুজন নারী সদস্য জেসমিনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জেসমিন অকপটে সব স্বীকার করেন।

জেসমিনের মোবাইলে এনামুল হকের ফেসবুক আইডি চলমান অবস্থায় পাওয়া যায় দাবি করে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, তার মোবাইলে আমরা সোনালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট পাই। যেখানে লাখ লাখ টাকার জমা রশিদের প্রমাণ আমরা পাই। তার মোবাইলে ২০-৩০ লাখ টাকা লেনদেনের বেশকিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।

কমান্ডার আল মঈন বলেন, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আটক করি। সেখানে সাক্ষীও ছিল। যুগ্ম সচিব এনামুল হকসহ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে জেসমিনের মোবাইল থেকে পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে প্রিন্ট করা হয়। আলামত সংগ্রহ শেষে যখন আমরা থানার উদ্দেশে যাচ্ছিলাম, মামলা করার জন্য তখন ওই নারী অসুস্থ বোধ করেন।

দুপুর ১টার দিকে আমরা তাকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তার সঙ্গে কথা বলেন। তার বোন, ফুফু ও চাচাকে ডাকা হয়। এমনকি ভূমি অফিসে তার সহকর্মী ও অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকেও (ল্যান্ড) ডাকা হয়। তাদের উপস্থিতিতেই তার চিকিৎসা চলছিল।

সন্ধ্যার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে সিটিস্ক্যান করে তার স্ট্রোকের আলামত পাওয়া যায়। একদিন পর  তিনি মারা যান।  কী কারণে উনার মৃত্যু হয়েছে সেখানে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি পোস্টমর্টেমেও পাওয়া যাবে।

গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র‍্যাব। এরপর ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। সুলতানা জেসমিন সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সহকারী পদে চাকরি করতেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.