কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের জগন্নাথপুর এলাকার আরিফ আহমেদ (২৪) প্রায় দুই বছর পর লিবিয়ার এক বন্দিশিবির থেকে মুক্ত হয়েছেন। পরিবার থেকে দালাল চক্রের হাতে ১২ লাখ টাকা পৌঁছানোর পর বন্দিশিবিরে তাঁর ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরিফের বড় ভাই আসাদ মিয়া এই তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল রোববার আরিফকে বন্দিশিবির থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর মুঠোফোনে কথা হয়েছে উল্লেখ করে আসাদ মিয়া বলেন, আরিফ বর্তমানে নিরাপদ জায়গায় আছেন। মুক্তিপণের এই টাকা সংগ্রহ করতে তাঁদের অনেক কষ্ট হয়েছে। এখন আরিফকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, আরিফের বাবা বাবুল মিয়া রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মচারী। দুই বছর আগে ফারুক মিয়া নামের স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকা চুক্তিতে অবৈধ পথে ইতালি যাত্রা করেন আরিফ। কথা ছিল প্রথমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ এবং পৌঁছানোর পর বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে। কথামতো ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়।লিবিয়া পৌঁছানোর পর ফারুকের সহযোগী সজীব মিয়া খবর পাঠান, সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যেতে হলে আরও তিন লাখ টাকা লাগবে। কথামতো টাকা পাঠানো হয়। টাকা পাওয়ার পরও আরিফকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেননি তাঁরা। এরই মধ্যে আরিফ একটি দালাল চক্রের হাতে আটক হন। সেখান থেকে টাকার বিনিময়ে মুক্ত হন। কিছুদিন পর আবার অন্য একটি চক্র তাঁকে আটক করে টাকা আদায় করে।
সর্বশেষ একটি চক্র বন্দিশিবিরে আটকে রেখে প্রতিদিন শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল। চক্রটি মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। কিছুদিন আগে আরিফকে নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। ভিডিওতে আরিফের বা চোখে গুরুতর আঘাত এবং হাতে–পায়ে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। এই সময় আরিফ কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে মুক্ত করার আকুতি জানাচ্ছিলেন। পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও ভাইরাল হয়।
ভয়ংকর নির্যাতনের এই দৃশ্য দেখার পর পরিবারের সদস্যরা আরিফকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দালাল চক্রের চাহিদা অনুযায়ী ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয় বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।