গণতন্ত্র মঞ্চের দুজন নেতা বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের দেওয়া খসড়া ঘোষণাপত্রের অধিকাংশ বিষয়ের সঙ্গেই বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা একমত হয়েছেন। দু-তিনটি বিষয় নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে আপত্তির বিষয়গুলো বাদ রেখেই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে তো একটা খসড়া বিএনপিকে দেওয়া হয়েছে। লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরাও একমত হলেন। ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত করার কথা ছিল।
যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির দাবি ১০ দফা এবং রাষ্ট্রমেরামত বা সংস্কারের ব্যাপারে ২৭ দফা প্রস্তাব করেছে দলটি। আর গণতন্ত্র মঞ্চের সংস্কারের রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ ১৪ দফা দাবি দিয়েছে। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের দাবি এবং রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক কর্মসূচি যা দেওয়া হয়েছে, তাতে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের প্রস্তাবে কিছু পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্য দূর করে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচিভিত্তিক ঘোষণাপত্র তৈরি করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিএনপির সঙ্গী হতে চায় না সিপিবি-বাসদের বাম জোট
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মূল দাবির বাইরে বিএনপির বাকি দাবিগুলো মানবাধিকার, সুশাসন, আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত এবং তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিষয় নিয়ে। গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফায় রয়েছে—সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, সংবিধানের ৭০তম অনুচ্ছেদের সংশোধন করে সরকার গঠনে আস্থা ভোট ও বাজেট পাস ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা রাখাসহ বেশ কিছু দাবি।
বিএনপি গত ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রমেরামতের রূপরেখার ২৭ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করে। সেখানে তারা সংবিধান সংস্কার কমিশন, জাতীয় সমঝোতা কমিশন, জুডিশিয়াল কমিশন, প্রশাসনিক কমিশন, মিডিয়া কমিশন, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন করবে বলে ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাষ্ট্রমেরামতের রূপরেখার বেশ কিছু বিষয় গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফাতেও রয়েছে।
আন্দোলনরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমন্বয় করতে সাত সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। গত ২৮ ডিসেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চেও বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের দেওয়া খসড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা হয়।
তবু বিএনপি ইসির সঙ্গে বসুক
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘দ্রুত ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে চেয়েছিলাম। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে মার্চ মাসও চলে যাচ্ছে। বিএনপির মতামতের অপেক্ষা করছি। রোজার পরে সর্বাত্মক আন্দোলনে যেতে চাই। রোজার মধ্যেই ঘোষণাপত্রের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।’
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা জানান, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই।
হঠাৎ বিএনপিকে কেন ইসির আমন্ত্রণ
সংবিধানের ৭০তম অনুচ্ছেদের সংস্কার, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি, সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মতো কিছু বিষয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করছে। বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক আদর্শ এবং দল বা জোটের চিন্তা থেকে কিছু দাবি ও সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রস্তাবগুলো সমন্বয় করেই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার কথা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঘোষণাপত্রের বিষয়টি নিয়ে লিয়োজোঁ কমিটি কাজ করছে।’
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১৮ মার্চ পৃথক সমাবেশ করেছে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা মনে করেন, ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে আন্দোলন হলে তা আরও গতি পাবে।