রোজার অপর নাম সংযম হলেও পরিমিত, সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার না খেলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এবার মার্চ- এপ্রিলের তাপদাহের মধ্যে রমজান পড়েছে। ফলে দীর্ঘসময় পানি পান না করে থাকতে হবে। কর্মস্থলে নতুন সময়সূচির কারণে ‘দেহঘড়ি’ও ভিন্নভাবে অ্যালার্ম দেবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি ধর্মীয় ভাবাবেগের সেঙ্গে বিজ্ঞানমনস্কতা আমাদের দেহ- মন দুইকেই সুস্থ রাখবে
খাদ্য গ্রহণে করণীয় ও বর্জনীয়
রোজায় সুস্থতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জেনেও অনেকেই ভাজা-পোড়া খাবার খেয়ে থাকেন। পেঁয়াজু, চপ, পাকোড়া, বেগুনি ছাড়াও অনেক ভাজা-পোড়া খাবার দৈনিক ইফতার মেন্যুতে থাকতে দেখা যায়। সারাদিন রোজা রেখে পাকস্থলী খুব ক্ষুধার্ত ও দুর্বল থাকে। তার পর যদি এত রকম গুরুপাক খাবার একসঙ্গে খাওয়া হয়, তাহলে কী অবস্থা হবে? পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা ইত্যাদি হবে রোজার নিত্যসঙ্গী। অনেকের ওজনও বেড়ে যায় ভাজা-পোড়া খাবারে, নানাভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। কােলেস্টেরলের মাত্রা ও উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি করে।
সেহরি করণীয়
খাবারের মূল উপাদান শর্করা যেমন চাল-আটা সাদার পরিবর্তে লাল গ্রহণ করলে একাধারে ক্ষুধা কম হয় এবং তেমনি পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়। প্রোটিনের প্রয়োজন মেটাতে মাছ বা মাংস তেল- মসলা দিয়ে না ভেজে ঝোল ঝোল করে রান্না করুন। অবশ্য অবশ্যই অন্তত একটি ডিম খাবেন। গর্ভবতী-স্তন্যদানকারী মা চিকিৎসকের পরামর্শে একাধিক ডিম খেতে পারেন। প্রচুর পরিমাণ পানি, ঘোল, দুধে পানি মিশিয়ে পাতলা করে পান করুন। তরমুজ জুস না করে পিস পিস করে কেটে খেলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। টক দই, বেলের শরবত গ্রহণ করুন। টাটকা শাকসবজি, কাঁঠালের এঁচোড়, লাউ, চালকুমড়া, শজিনার অপেক্ষাকৃত সহনীয়, ভিটামিন সি এবং মূল্যবান খনিজসহ উচ্চ পুষ্টিগুণে ভরপুর।
বর্জনীয়
বিরিয়ানি, খিচুড়ি, তেহারি, পোলাও জাতীয় খাবার বদহজমসহ সারাদিন হাঁসফাঁসভাব এমনকি মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। চা-কফি পিপাসা ও অ্যাসিডিটি বাড়াতে পারে।
ইফতারে করণীয়
হৃদরোগ এড়াতে এক বসায় ইফতার ও রাতের খাবারের বদলে অল্প অল্প করে কয়েকবারে খান। ছোলা মসলা মিশিয়ে কড়া করে রান্নার পরিবর্তে কাঁচা খান। খেজুর, কলা, পেঁপে জাতীয় ফল মেনুতে রাখুন। শসা-টমেটোর সালাদ ইফতারের মজাদার খাবারের ফলে গৃহীত বাড়তি ক্যালরি থেকে বিরত রেখে স্থূলতা প্রতিরোধ করবে।
বর্জনীয়
ধুলাবালি, মাছি, পোকা বসা দোকানের খোলা খাবার উদরাময়সহ নানা রোগের কারণ হতে পারে। একই তেল দিয়ে বিভিন্ন পদের রান্না খাবারকে বিষময় করে তুলতে পারে।এগুলোতে ক্ষতিকর পদার্থ এমনকি মোবিল ব্যবহারের কথা শোনা যায়। ডুবো তেলে ভাজা খাবার যেমন পেঁয়াজু, বেগুনি ইত্যাদি ট্রান্সফ্যাটে ভরপুর। পাতে কাঁচা লবণ বর্জনীয়।
ঘুম
শেষরাতে উঠে যাওয়া ছাড়া বিভিন্ন কারণে ঘাটতি ঘুম পূরণে সোশ্যাল মিডিয়া কম ব্যবহার করে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। দিনে ঘুমানোর সুযোগ থাকলে হাতছাড়া করবেন না। ঘুমানো সম্ভব না হলে হালকা ন্যাপ নিন।
রোগীদের জন্য বিশেষ উপদেশ
ডায়াবেটিসের রোগীরা অবশ্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ইনসুলিন বা এই জাতীয় ওষুধ, খাবারের চার্ট অ্যাডজাস্ট করে নিন। ইফতারের সময় বাড়তি ক্যালরি পরিহার করতে জিলাপি, বুন্দিয়া, মিষ্টি পরিহার করা শ্রেয়। ডায়াবেটিসের পুরোনো রোগীরা ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা কমে ৪ এর নিচে গেলে মিষ্টি খেয়ে রোজা ভেঙে ফেললে বড় রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
শরীর চর্চায় না নেই হালকা শরীর চর্চা চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। দিনে ৩০ মিনিট হাঁটাকে এই গোত্রে ফেলা যায়। বিকেলের পরিবর্তে রাতে হাঁটাই উত্তম। তবে ভরপেট খাবার পর যথেষ্ট বিরতি দিয়ে হাঁটাই স্বাস্থ্যসম্মত।
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
[ক্ল্যাসিফাইড স্পেশালিস্ট, ফার্মাকোলজি]