সেতুর বাঁধে সরু তুরাগ নদ

0
170
বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসেতুর পিলার নির্মাণ করতে দুই পাশ থেকে মাটি ফেলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে পুরো নদ।

বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলাম বলেন, ‘উড়ালসড়কের বাকি কাজ শেষ করতে নদের ওপর ছয়টি পিলার বসাতে হবে। সেই কাজের জন্যই সাময়িকভাবে নদটির কিছু অংশে ভরাট করা হয়েছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। এ বিষয়ে আমাদের সব ধরনের অনুমতি আছে।’

■ নদের এই চিত্র গাজীপুর ও রাজধানীর উত্তরাকে যুক্ত করা   টঙ্গী সেতুর নিচে।

■ নদের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। যাতায়াত করতে পারছে না কোনো ভারী নৌযান।

রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্পে উত্তরার হাউজবিল্ডিং থেকে টঙ্গীর চেরাগ আলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার উড়ালপথ। এর বাইরে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছয়টি উড়ালসড়ক। এরমধ্যে তুরাগ নদের ওপর টঙ্গী সেতু ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে ১০ লেনের উড়ালসড়ক। ইতিমধ্যে শেষ হয়ছে পাঁচ লেনের কাজ। এখন চলছে বাকি পাঁচ লেনের কাজ।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর পাঁচ লেনের দুই লেন চালু করা হয়েছে ইতিমধ্যে। সেখানে দিয়ে যানবাহন চলছে। নিচে নদের ওপর অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি বেইলি সেতু। সেখানেও গাড়ি চলছে। ডান পাশে চলছে সেতুর বাকি পাঁচ লেন নির্মাণের কাজ। নদটি প্রায় ২০০ ফুট প্রশস্ত। সেতুর পিলারের ভিত ঢালাই দিতে নদের দুপাশ থেকে আড়াআড়িভাবে ভরাট করা হয়েছে। এতে নদটি দুপাশ থেকে সংকীর্ণ হয়ে খালের মতো হয়ে গেছে। ফাঁকা জায়গা রাখা আছে ১৫ থেকে ২০ ফুটের মতো। এতে নদের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যহত হচ্ছে। যাতায়াত করতে পারছে না কোনো ভারী নৌযান বা বড় ট্রলারও।

টঙ্গী বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, তুরাগ নদে যে কত রকম অত্যাচার, তা বলে শেষ করা যাবে না। যে যেদিক দিয়ে পারছেন, নদ দখল করছেন। এখন আবার প্রকল্পের ব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় পুরো নদই ভরাট করে ফেলছে। এতে নদ শেষ।

আশপাশের এলাকাসহ এই নদ দিয়ে ঢাকা, সাভার, গাজীপুরের কড্ডা, কোনাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার পানি ওঠানামা করে। কলকারখানার দখল-দূষণসহ বাঁধ ও নানারকম আগ্রাসনে নদটি নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাত হলে টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের আগস্টে ভারী বৃষ্টিপাতে টঙ্গীর নামাবাজার বস্তি, কলাবাগান বস্তি, নিশাদপাড়া এলাকার বস্তিসহ বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।

নদটির দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)। এ বিষয়ে কথা হলে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উন্নয়ন কাজের স্বার্থে সাময়িকভাবে নদের কিছু অংশ ভরাট করা যেতে পারে। তবে কাজ শেষে অবশ্যই নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপরও আমরা বিষয়টি সরেজমিনে দেখব। কোনো নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় হলো কি না, তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেনের ভাষ্য, বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ হওয়া সেতুর পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, কোনো স্থাপনা বা সেতু করার সময় নদ-নদীতে যে বাঁধ দেওয়া হয়, কাজ শেষ করার পর সাধারণত তা সরানো হয় না। সরালেও তা পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। তুরাগের ওপর যেভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, তা দেখলেই গা শিউরে ওঠে। এটি নদের টুঁটি চেঁপে ধরার মতো, নদ হত্যার শামিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.