ঢাকায় বিপুল সম্পদের গল্প ফাঁদছেন আরাভ

0
160
আরাভ

দিন যত গড়াচ্ছে, দুবাইয়ে রবিউল ইসলাম আরাভ খানের সম্পদের নানা তথ্য বের হচ্ছে। দুবাইয়ে যাঁদের সঙ্গে মিশছেন, তাঁদের কাছে তিনি দাবি করছেন– ঢাকায় একাধিক টেলিভিশনের মালিকের সঙ্গে তাঁর সখ্য। এমনকি কারওয়ান বাজারের একটি টেলিভিশন ভবনের মূল মালিক আরাভ। তাঁর এত সম্পদ রয়েছে যে, ওই টেলিভিশনের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়ার টাকা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না।

দুবাইয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির একাধিক সদস্য  বলেন, আরাভের সঙ্গে কারও পরিচয় হওয়ার পরপরই সম্পদ আর ক্ষমতা নিয়ে কিচ্ছা শোনান। এও বলেন, তিনি যা চাইবেন; বাংলাদেশে সেটা এক ঘণ্টায় বাস্তবায়ন করতে পারেন। দামি ব্র্যান্ডের পোশাক-আশাক পরিহিত অবস্থায় থাকায় অনেকেই প্রথমে তাঁর কথা শুনে ভড়কে যান। এমনকি অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে সুস্পর্ক রয়েছে– এটা বোঝাতে হঠাৎ কাউকে কাউকে ফোনও করেন।

দুবাইয়ে দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন বাংলাদেশি শিল্পী স্বর্ণের শোরুম উদ্বোধন করতে যাওয়ায় আলোচনায় আসেন পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ। তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিউলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও অস্ত্র, নারী নির্যাতন, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধের ৯ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। দুবাই থেকে তাঁকে দেশে ফেরাতে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এদিকে হত্যা মামলার আসামি রবিউল দুবাইয়ে গিয়ে বিত্তশালী হলেন, তা নিয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমান বলেন, পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে ইন্টারপোলকে অবহিত করা হয়েছে। যদি তিনি কোনো কারণে দুবাই ছাড়েন, তাহলে নিশ্চয় পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা অবগত থাকবে।

বাংলাদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধি হিসেবে দুবাইয়ে কর্মরত একাধিক সাংবাদিক বলেন, আরাভের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সময় প্রথমে তিনি নিজের ক্ষমতা প্রমাণে বিভিন্ন মহলের প্রভাবশালীদের গল্প শুরু করেন। এও বলেন, কোনো সাংবাদিকের চাকরি খাওয়া তাঁর ২-৩ মিনিটের মামলা। কারণ গণমাধ্যমের অনেক মালিকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা আছে। তবে বাংলাদেশি শিল্পী সমিতির দুবাইয়ের একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি মাত্র ১ হাজার দিরহাম অনুদান দেওয়ার পর আরাভের কথিত অর্থ-বিত্ত নিয়ে অনেকের মধ্যে রহস্য তৈরি হয়। দুবাইয়ে যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে আছেন, তাঁদের অনেকের নাম ভাঙাতেন তিনি। দুবাই আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর পর তা ফেসবুকে প্রচার করতেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আরাভ অবৈধ বেশকিছু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চোরাই পথে স্বর্ণের বার পাচার ছাড়াও অনলাইনকেন্দ্রিক কারবার রয়েছে তাঁর। এমনকি দুবাইয়ে পার্টির আয়োজন করে অর্থ কামিয়েছেন তিনি। তদবিরের মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কারও কারও কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। শোবিজ জগতের অনেকের সঙ্গে আরাভের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজ আরাভের নিমন্ত্রণে দুবাই গেছেন।

আরেকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ হত্যার পর বাংলাদেশ থেকে পালানোর আগেও অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেন আরাভ। দুই সহযোগীসহ একবার পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালান। জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনায় একাধিক মামলাও তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। দুবাইয়ে নিজেই স্বর্ণ কারবারিদের সমিতির নেতা হিসেবে পরিচয় দেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে আরাভ বাংলাদেশে ঢুকেছেন– এমন তথ্য তারা এখনও পায়নি। তবে দেশে ঢুকলে কোনো উপায়ে হয়তো প্রবেশ করেছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর নামে বাংলাদেশি কোনো পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি।

গোয়েন্দা বিভাগের ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকাকালে আরাভ বাংলাদেশে এসেছিলেন কিনা, তদন্ত করে দেখা হবে।

সূত্র জানায়, আরাভ  মোটরসাইকেল চুরি, ক্যামেরা ছিনতাই, অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা আদায়সহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ১২টির মতো মামলা আছে। এর মধ্যে একটি হলো ডিএসএলআর ক্যামেরা চুরির মামলা। ২০১৭ সালের ২৩ জুন মামলার বাদী শুকুর আলী ও তাঁর বন্ধু মো. হাসান হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরতে যান। রামপুরাগামী রাস্তার ব্রিজের ওপর অবস্থানকালে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি একটি মোটরসাইকেলে এসে বাদীর হাতে থাকা ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্রুত মগবাজারের দিকে পালিয়ে যান। ২০১৮ সালের ৭ মে আদালত আরাভ খানের উপস্থিতিতে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আরাভ খান তাঁর শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে মগবাজারের বাসায় যান। গুলিভর্তি রিভলবারসহ শ্বশুরের বাসার সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় আরাভের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন ডিবি পশ্চিমের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের তৎকালীন উপপরিদর্শক সুজন কুমার কুণ্ডু।

‘পুরস্কৃত করা উচিত’ : গতকাল সকালে দুবাই থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘পুলিশ আমাদের সতর্ক করলে যেতাম না। পুলিশ এ বিষয়টি জানলে আমাদের মেসেজ দিত অথবা এয়ারপোর্টে আটকাতে পারত। বলতে পারত যে, ভাই, উনি মার্ডার কেসের পলাতক আসামি, আপনারা যাবেন না। আমরা যাওয়ার পর পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ বলছে যে, তারা নাকি আমাদের জানিয়েছে। আমরা যদি জানতাম, তাহলে উনারা আটকাতে পারত। তারা এয়ারপোর্টে কেন আটকাল না? পুলিশই জানে না, আসামি কোথায় আছে। আমরা যাওয়ার পর পুলিশ আসামির সন্ধান পেয়েছে। এ জন্য তো আমাদের পুরস্কৃত করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিআইজি হারুন স্যার বলেছেন, আরাভ সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়েছে। একটা মেসেজ দেখান। ১৫ তারিখ অনুষ্ঠান। ১৪ তারিখে নিউজ দেখলাম যে, সে মার্ডার কেসের আসামি। আমরা ওখানে ১৩ তারিখে পৌঁছেছি। আমরা ওখানে না গেলে তারা এই আসামির খবরই পেত না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.