বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন আফসানা মিমি (২৬)। কিন্তু সার্টিফিকেট আর নেওয়া হলো না। তার আগেই বাস দুর্ঘটনায় নিভে গেছে আফসানার জীবন প্রদীপ। মেয়েকে হারিয়ে আফসানার মা কানিজ ফাতেমা (৫৩) পাগলপ্রায়।
আফসানা মিমি গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়ার প্রয়াত আবু হেনা মোস্তফা কামালের বড় মেয়ে।
আফসানার কানিজ ফাতেমা এবং ছোট বোন রুকাইয়া ইসলাম রূপা আজ রোববার সকালে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে থেকে তাকে ইমাদ পরিবহনের বাসে উঠিয়ে দেন। তার ঢাকা হয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইমাদ পরিবহনের ওই বাসটি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।
এ ঘটনায় আফসানাসহ গোপালগঞ্জের অন্তত ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে গোপালগঞ্জজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত অপর ব্যক্তিরা হলেন- গোপালগঞ্জের পাচুড়িয়া এলাকার সামচুল হক রোডের মাসুদ আলমের মেয়ে সুরভী আলম সুইটি (২২), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনাদী রঞ্জন মজুমদার (৫৩), বাসের সুপার ভাইজার মানিকদাহ গ্রামের মিজানুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস (২৫), সদর উপজেলার বনগ্রামের সামসুদ্দিন শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৪০) ও মুকসুদপুরের আদমপুর গ্রামের আনজু খানের ছেলে মাসুদ খান (৩০)।
আফসানার বাবা আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিআইডাবলুটিসির কর্মকর্তা ছিলেন। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি মারা যান। এরপর আফসানার মা কানিজ ফাতমা একা হাতে ২ মেয়েকে বড় করেছেন। শত কষ্টের মধ্যেও তিনি দুই মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নিচ্ছিলেন। আফসানার বোন রূপা গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
কানিজ ফাতেমা আক্ষেপ করে বলেন, সার্টিফিকেট আনতে যাওয়ার আগের দিন (শনিবার) আমার জন্য এক মাসের ওষুধ কিনে দিয়ে গেছে। আমি এখন এই ওষুধ দিয়ে কী করবো? আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই।
ইমাদ পরিবহন ম্যানেজার মো. বাসু শেখ জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বাসটিতে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন কাউন্টার থেকে ১৪ জন যাত্রী উঠেন। তাদের মধ্যে কত জনের মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।