ইয়েমেনে হুতিদের অস্ত্র সরবরাহ করবে না ইরান

0
262
ইরান থেকে ইয়েমেনগামী জব্দ করা অস্ত্রের চালান

চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার চুক্তির অংশ হিসেবে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে রাজি হয়েছে ইরান।মার্কিন ও সৌদি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ  তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরানের এ পদক্ষেপ ইয়েমেনে শান্তি অর্জনের নতুন প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করবে। কারণ এটি সংঘাতের অবসানের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য জঙ্গি গোষ্ঠীটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। হুতিরা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার পর গত বছর দেশটিতে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় যুদ্ধবিরতি মাত্র ছয় মাস স্থায়ী ছিল।

তেহরান প্রকাশ্যে হুতিদের অস্ত্র সরবরাহের কথা অস্বীকার করলেও জাতিসংঘের পরিদর্শকরা বারবার জব্দ করা অস্ত্রের চালানগুলো ইরান থেকে আসা বলে শনাক্ত করেছেন।

ডব্লিউএসজের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন ও সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, ইরান যদি হুতিদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে সংঘাত বন্ধ করতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চাপে পড়বে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

তারা আরও জানান, ইরান দরকষাকষি বাদ দিয়ে দুই মাসের মধ্যে দূতাবাস চালুর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

এক সৌদি কর্মকর্তা বলেছেন, সৌদি আরব প্রত্যাশা করছে হুতিদের ওপর জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে ইরান। অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সৌদি আরবে হামলা ও ইয়েমেনে আরও ভূখণ্ড দখল হুতিদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, সৌদি-ইরান সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চুক্তিটি অদূর ভবিষ্যতে ইয়েমেনে একটি চুক্তির সম্ভাবনাকে জোরদার করেছে। ইয়েমেনে সংঘাত নিয়ে ইরানের আচরণ হবে গত সপ্তাহে সই করা চুক্তির জন্য পরীক্ষা।

এদিকে, ইয়েমেনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিথস বুধবার সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু করার সাম্প্রতিক চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলা ইয়েমেনি সংঘাতের অবসানের জন্য আলোচনার ‘পরিধি ও গভীরতায় এক ধাপ পরিবর্তন’ দেখা যাচ্ছে।

ইয়েমেনের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গ্রিফিথস ইয়েমেনের সব পক্ষকে সৌদি-ইরান চুক্তির সুবিধা নিতে ও নতুন আঞ্চলিক কূটনৈতিক গতি ফেরাতে শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সুসম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি গেং শুয়াং বলেন, অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতায় ভরা আজকের বিশ্বের জন্য এই চুক্তি একটি সুসংবাদ। এটি এই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা, সংহতি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক।

আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ চুক্তি ইয়েমেনের পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।

দীর্ঘ সাত বছর পর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ও দূতাবাস পুনরায় চালু করতে চলতি মাসেই সম্মত হয়েছে  সৌদি আরব ও ইরান। তেহরান বলছে, এই চুক্তি ইয়েমেনে যুদ্ধের একটি রাজনৈতিক সমাধান আনতে সাহায্য করবে। ২০১৪ সালে পর থেকে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় ইরান ও সৌদি আরব। তবে উভয় দেশই পরস্পরবিরোধী পক্ষকে সহযোগিতা করে আসছে। যুদ্ধে ইয়েমেনে মানবিক বিপর্যয় ও হাজারো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.