দুইটি নতুন খাল কেটে তিস্তার পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে পশ্চিমবঙ্গ। ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ খবর সঠিক কি না, তা দেশটির কাছে জানতে চাইবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে ভারতে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পানি বণ্টন বিষয়ে বাংলাদেশ অংশের বহুপক্ষীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
তিনি বলেন, চিঠি খসড়া তৈরি হয়ে আছে। শিগগির সেটা ভারতে কাছে পাঠানো হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিস্তা থেকে পানি প্রত্যাহার পরিকল্পনার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে বাংলাদেশে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটা আমাদের নজরে এসেছে। কিন্তু আমরা অফিসিয়ালি ভারতের কাছ থেকে জানতে পারিনি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যটি সত্য কি না, তা জানার পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে বাংলাদেশ। এ কারণে ভারত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য পাওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করবো না। আগে ভারত থেকে তথ্য পাই, তারপরে বলবো।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে সেটা উদ্বেগের কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ ফারুক বলেন, অবশ্যই সেটা উদ্বেগের বিষয় হবে। কিন্তু আমরা সবসময় আমাদের বন্ধু ভাবাপন্ন রাষ্ট্র হিসেবে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার নীতিতে চলি। সেটা যদি না হয়, তাহলে আমাদের তো অপশন আছে। কী অপশন আছে, সেটা তো আপনাদের (সাংবাদিকদের) বলবো না।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় জলমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রস্তুতিও চলছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে ভারতীয় পক্ষকে বৈঠক অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবে তারা মৌখিকভাবে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। আনুষ্ঠানিক দিন-তারিখ নির্ধারণ হলে আপনারা জানতে পারবেন।
এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতে সঙ্গে পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানের দুইটি পথ, টেকনিক্যাল আলোচনা ও রাজনৈতিক আলোচনা। আমার মতে এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ রাজনৈতিক আলোচনা। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টেকনিক্যাল আলোচনার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। এভাবে বাংলাদেশ ভালো অবস্থান বজায় রাখতে পারবে না।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননে প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ বিভাগ। গত ৪ মার্চ এ খবর প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার আরও কৃষি জমিকে সেচের আওতায় আনতে পশ্চিমবঙ্গ এ উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে তিস্তা কেন্দ্রিক পানি সংকট আরও বেড়ে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশি পানি বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি এক দশকের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে- তারা তিস্তা চুক্তি করতে রাজি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কারণে হচ্ছে না। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের ইশারা ছাড়া কোনো রাজ্য সরকার বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক চুক্তির বিষয়ে বাধা দেবে, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।