গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের (২০২৩-২৪) প্রথম দিনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এদিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ গিয়ে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পিটিয়ে মিলনায়তন থেকে বের করে দেয়। পুলিশের হামলায় আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এদিন ধাক্কাধাক্কি, মারধর, ভাঙচুর ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পরে ভোট শুরু হয়। আজ হচ্ছে দ্বিতীয় ও শেষ দিনের ভোট। এমন অবস্থায় গ্রহণযোগ্য কমিটি করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
আজকের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব এ বিষয়ে বলেন, গতকাল যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, যা জাতির জন্য, এই দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য জঘন্যতম ঘটনা। তাঁরা এই ঘটনার নিন্দা জানান, ধিক্কার জানান। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কী! দেশে বর্তমানে কোনো গণতন্ত্র তো নেই-ই, আইনের শাসনও নেই। কোনো সরকার আছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন বরাবরই সুষ্ঠু হয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা একটা আদর্শ নির্বাচন। এখানে যাঁরা দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা আইনজীবী মানুষ। যাঁরা নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করেন, তাঁরাও আইনজীবী। এখানে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়। গতকাল তাঁদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। তার কিছুদিন আগে প্রেসক্লাবের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। অর্থাৎ, আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিচ্ছে। তাদের নিজস্ব একটা বিধান, বিধি, সংবিধান তারা চালু করছে।’
আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বিএনপি একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এই অভিযোগ প্রসঙ্গ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকার বলে, আমরা নাকি এ দেশে একটা সমস্যার সৃষ্টি করতে চাচ্ছি, যাতে ভোট না হয়। ভোট তো নষ্ট করেছ তোমরা (আওয়ামী লীগ সরকার)। তোমরাই এখানে যেন ভোট না হয়, তার ব্যবস্থা করেছ, জনগণ যেন ভোট দিতে না পারে। তোমরা নির্বাচনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান রাস্তা নির্বাচন। সুষ্ঠু, অবাধ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জায়গাটা তারা শেষ করে দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মাঝেমধ্যে কষ্ট হয়, কোন দেশের জন্য যুদ্ধ করলাম! এই বাংলাদেশ তো আমরা চাইনি। আমরা চাই, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, যেখানে মানুষের মধ্যে সাম্য থাকবে, মানবিক মূল্যবোধ থাকবে।’
যমুনা নদী ছোট করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাজার বছর ধরে প্রবহমান যমুনা নদী। আপাতত কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এটাকে ছোট করে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছে। এটাকে কী বলবেন?’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ ১২–দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।