এবার তারল্য বাড়াতে ঋণ নিচ্ছে ক্রেডিট সুসি

0
142
ক্রেডিট সুসি

তিন দিনের ব্যবধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়েই ব্যাংক খাতে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারদর তরতর করে পড়ছে। কিন্তু ক্রেডিট সুসির মতো ব্যাংক তারল্য বাড়াতে ঋণ নিচ্ছে, এমন খবরে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক আরও বেড়েছে, সামনে বুঝি আরও বড় সংকট আসছে।

এসভিবি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ক্রেডিট সুসি জানায়, তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে দুর্বলতা আছে। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর গতকাল বুধবার ওয়াল স্ট্রিটে ক্রেডিট সুসির শেয়ারদর ২৪ শতাংশ পড়ে যায়। এ ঘটনার পর সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে জানায়, তারা আর ক্রেডিট সুসি ব্যাংকে বিনিয়োগ করবে না। তাতে বিশ্বের প্রায় সব আর্থিক বাজারেই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়; বড় বড় সূচকের খাড়া পতন হয়।

যদিও ক্রেডিট সুসি বারবার আশ্বস্ত করেছে, গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের আশ্বস্ত করতেই এই ঋণ নেওয়া।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বলেছে, সুইস ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেট সুপারভাইজরি অথরিটি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে চেয়েছে। সে জন্যই এ ঋণ দেওয়া।

এদিকে এসভিবি পতনের পর মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস আরও ছয়টি মার্কিন ব্যাংকের ঋণমান হ্রাসের বিষয় পর্যালোচনা করছে। এর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিগনেচার ব্যাংকের মান জাঙ্ক স্ট্যাটাস বা টেরিটরিতে (ঋণ পরিশোধে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ) নামিয়ে আনে তারা। ঋণমান কমে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঋণ নেওয়া কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়। মুডিসের পর্যালোচনায় থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক, জিয়নস, ওয়েস্টার্ন অ্যালায়েন্স, কমেরিকা, ইউএমবি ফাইন্যান্সিয়াল ও ইনট্রাস্ট ফাইন্যান্সিয়াল।

এগুলোর মধ্যে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক সে দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশেষ নজরদারিতে আছে বলে জানা গেছে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু কেনিংহাম সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, ‘ক্রেডিট সুসির এই ঋণ করার ঘটনায় সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হই। সেটা হলো, এটা কি পৃথক বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা, নাকি নতুন কোনো বৈশ্বিক সংকটের শুরু।’

এবারের সংকট ২০০৮ সালের মতো নয় বলে মনে করছেন বেশির ভাগ বিশ্লেষক।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া ল স্কুলের করপোরেট ল বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড স্কিল মনে করেন, নীতি সুদহার বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝারি গোছের ব্যাংকগুলো দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। তা ছাড়া ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়া মানুষের মনে উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবে এবার এখনো ২০০৭-০৮ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাতের বর্তমান অবস্থা ভালো হলেও গুজব ও আতঙ্ক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনাস্থার কারণে আমানতকারীরা আমানত তুলে নিতে শুরু করলে সংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তবে আশার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক এক বছর আগের তুলনায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। জানুয়ারি মাসেও বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৪। ফলে, আগামী বৈঠকে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোর নীতি থেকে আপাতত সরে আসতে পারে। এতে দেশটির বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পরপর দুই ব্যাংক বন্ধের খবরে আমানত নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন নাগরিকদের। ছোট ও আঞ্চলিক ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তোলার হিড়িক পড়ে গেছে। তাঁরা এখন জেপি মরগান চেজ, ব্যাংক অব আমেরিকা (বিওএ) ও সিটি গ্রুপের মতো বড় ব্যাংকগুলোয় হিসাব স্থানান্তর করছেন। ঠিক বাংলাদেশে যেমন গত বছর ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তোলার হিড়িক পড়ে যায়।

পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্যাংকগুলো নতুন হিসাব খুলতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বারবার আমানতকারীদের আশ্বস্ত করলেও তা হালে পানি পাচ্ছে না। যদিও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, মানুষের আস্থা ফিরলে আবার তারা ছোট ও মাঝারি ব্যাংকে ফিরবেন।
এদিকে পরপর দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারের দর অনেকটাই কমেছে। গতকাল ইউরোপের স্টক্স ইউরোপ ব্যাংকিং সূচকের পতন হয়েছে ৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে ডাও জোনস সূচকের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৯ ও এসঅ্যন্ডপি সূচকের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের এফটিএসই সূচকের পতন হয়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.