বিড়ি-সিগারেটের টুকরা থেকে আগুন
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ২০২১ সালে শুধু বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে ৩ হাজার ১৯৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মোট অগ্নিকাণ্ডের তুলনায় এই হার ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আর ২০২২ সালে একই কারণে ৩ হাজার ৮৭৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটি মোট অগ্নিকাণ্ডের তুলনায় ১৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ক্ষতি হয়েছে ৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বেশি। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিড়ি সিগারেটের ফেলে দেওয়া জ্বলন্ত টুকরা থেকে ১৭ হাজার ৭৯৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
* বিড়ি-সিগারেটের ফেলে দেওয়া জ্বলন্ত টুকরা থেকে ১৭ হাজার ৭৯৭টি অগ্নিকাণ্ড
* ছোটদের আগুন নিয়ে খেলার সময় ৩ হাজার ৪৪২টি অগ্নিকাণ্ড
* বাজি পোড়ানোর সময় অগ্নিকাণ্ড ২৭৪টি
* খোলা বাতির/জ্বালানির ব্যবহারে অগ্নিকাণ্ড ২ হাজার ৩৩৩টি।
বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরার পাশাপাশি ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা, খোলা বাতির ব্যবহার, বাজি পোড়ানো, গরম ছাই বা জ্বালানি ফেলে রাখার মতো ঘটনায় প্রতিবছর আগুন লাগছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, চুলা, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, যন্ত্রাংশের ঘর্ষণজনিত, বজ্রপাত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উচ্চতাপ, মেশিনের মিস ফায়ার, স্বতঃস্ফূর্ত: স্ফূর্ত প্রজ্বলন, চিমনির স্ফুলিঙ্গ, স্থির বিদ্যুৎ, রাসায়নিক বিক্রিয়া, বিস্ফোরণ (সিলিন্ডার, বয়লার), গ্যাস সরবরাহ লাইনের আগুন, যানবাহনের দুর্ঘটনাজনিত বা অজ্ঞাত কারণেও আগুন লাগছে। সতর্ক হলে এ রকম অনেক অগ্নিকাণ্ডই এড়ানো সম্ভব।
আগুনে ক্ষয়ক্ষতি
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল অর্থাৎ, মোট পাঁচ বছরে আগুনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলার মতো ঘটনাসহ তুচ্ছ কারণে আগুন লাগার ঘটনা একেবারে কম নয়। গত পাঁচ বছরের হিসাব বলছে, ৩ হাজার ৪৪২টি ঘটনা ঘটেছে এ সময়ে।
বিশেষ উৎসবে ছোটরা এমনকি বড়রাও বাজি পুড়িয়ে মজা করেন। আর শুধু এই মজার কারণে আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে চারপাশ। ফায়ার সার্ভিসের ওয়েবসাইটে দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, বাজির আগুনে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২৭৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
হাটবাজারে বা অন্য কোনো জায়গায় খোলা বাতির (কুপি) ব্যবহারেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এ কারণে গত পাঁচ বছরে (২০১৮ থেকে ২০২২) মোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৩৩৩টি। একেক বছরে শুধু এ কারণে ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি টাকার বেশি হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে বিড়ি–সিগারেটের ফেলে দেওয়া জ্বলন্ত টুকরা, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা, বাজি পোড়ানো এবং খোলা বাতির ব্যবহারে মোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৪ হাজার ২৮টি। এ সময়ে বৈদ্যুতিক গোলযোগ বিভিন্ন কারণে অগ্নিকাণ্ডের মোট সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৪৯২টি। মারা যান ৭৮৬ জন নারী ও পুরুষ। অর্থাৎ, ছোট কারণগুলো প্রতিরোধ করা গেলে মোট অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৪৮৪টিতে নেমে আসত। মৃত্যু এবং জানমালের ক্ষতিও কমে আসত।
দরকার সচেতনতা
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ঢাকা) দিনমনি শর্মা বলেন, সারা দেশের ৪৯৩টি স্টেশনের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। প্রতি শনিবার উপজেলায় হাটবাজারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে অনেক সময় মানুষ ভাবে বাজারে এসে আবার এসব কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কোনো মানে হয় না। এসব অনুষ্ঠানে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি কেউ যদি ধূমপান করেন তিনি যাতে বিড়ি বা সিগারেটের টুকরা ফেলে দেওয়ার আগে আগুনটুকু নিভিয়ে ফেলেন, তা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক কিছু বলি, মানুষ তা মানতে চায় না। মানুষ অনেক সময় ক্ষমতা দেখানোর জন্যও নিয়মনীতি মানতে চায় না।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আগুন প্রতিরোধ করা না গেলে ১৫তলা হাসপাতাল ভবন বানিয়েও আগুনে পোড়ার যন্ত্রণা কমানো যাবে না। আগুনে পুড়ে মৃত্যুর মিছিল বাড়তেই থাকবে। আগুনের শিকার আমি, আপনি যে কেউ হতে পারেন।’