৫ মার্চ ওই আশ্রয়শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে যায়। ঘটনা তদন্তে ওই দিনই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক। কমিটিতে জেলা পুলিশ, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), ফায়ার সার্ভিস ও গোয়েন্দা সংস্থার একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়।
আবু সুফিয়ান বলেন, আশ্রয়শিবিরে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছিল পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তদন্তের সময় এর সপক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
কারা আগুন লাগিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা ও তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা; আশ্রয়শিবিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিরুনি অভিযান চালানো ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো; প্রতিটি ব্লকের সড়ক যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা; সড়কের পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি; রোহিঙ্গাদের ঘরে ছাউনি হিসেবে তেরপলের পরিবর্তে কম দাহ্য পদার্থের তৈরি কিছু সরবরাহ; আশ্রয়শিবিরে পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন; আশ্রয়শিবিরের অভ্যন্তরে দোকানপাট ও মার্কেট নির্মাণ বন্ধ; অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ; আশ্রয়শিবিরে পর্যবেক্ষণচৌকি ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি স্থাপন; এক ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের অন্য ক্যাম্পে যাতায়াত সীমিত এবং কাঁটাতারের বেষ্টনী নির্মাণ।
৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে আরও ৭৪ পৃষ্ঠার তথ্য ও সুপারিশ সংযুক্ত করা হয়। এতে ৫০ রোহিঙ্গাসহ মোট ৭০ জনের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন কমিটির সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রধান আবু সুফিয়ান বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত ৫০ জন রোহিঙ্গা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেছে। একেকজনের বক্তব্যে জড়িত ব্যক্তিদের ভিন্ন ভিন্ন নাম এসেছে। এ কারণে কাউকে নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা যায়নি। তাই মামলা করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
৫ মার্চ বেলা আড়াইটায় আগুনের সূত্রপাত, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সময় লাগে উল্লেখ করে আবু সুফিয়ান বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক স্থানে আগুন লাগানো হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এ দুটি বিষয় অগ্নিকাণ্ড নাশকতামূলক বলে প্রমাণ করে। এ ছাড়া রোহিঙ্গারা আগুন নেভাতে গেলে অনেকে নিষেধ করেন।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের সর্বশেষ তথ্যমতে, ৫ মার্চের অগ্নিকাণ্ডে ২ হাজার ৮০৫টি রোহিঙ্গা ঘর ভস্মীভূত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৯২৫ রোহিঙ্গা।
এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ঘর পুড়ে নিহত হয়েছিল ১৫ জন রোহিঙ্গা।