সহ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অন্তত দুই শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে কাভার করা যাচ্ছে না। আমরা তাঁদের বাস দিয়ে রামেকে (রাজশাহী মেডিকেল কলেজ) পাঠাচ্ছি।’
আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমাম উল হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মীর কাদির, অপি করিম, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ। প্রাথমিকভাবে বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে আসনে বসাকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে বাসের চালক শরিফুল ও চালকের সহকারী রিপনের কথা–কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে রিপনের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর আবার বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক জোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তখন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পাল্টা ধাওয়া করেন। এতে সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি তৌসিফ কাইয়ুম বলেন, বাসে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঝামেলা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁদের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাদির আহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কাজ করছে।’
সরেজমিন দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও দোকানদারেরা মুখোমুখি অবস্থানে আছেন। স্থানীয় দোকানদারেরা অবস্থান করছেন বিনোদপুর বাজারে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের ভেতরে ক্যাম্পাসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজশাহী–ঢাকা মহাসড়কের বিনোদপুর হয়ে কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। বিনোদপুর বাজারে অবস্থান নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। রাত আটটার পরে সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি সব পক্ষকেই শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও সংঘর্ষ চলছে।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বিনোদপুর বাজারে যান। তখন তাঁর মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করা হয়। এতে ঘটনা আরও বড় হয়ে যায়। শুরু হয় এক পক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ। বিনোদপুর বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলো থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর ফটকে এসে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে বিনোদপুর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।
বিনোদপুর বাজারে অবস্থান নেওয়া সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি এলে দুজন মিলেই পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করবেন।