মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছর থেকে সুদের হার বাড়িয়েই চলেছে। মাত্র কিছুদিন আগেই এই সুদহার ছিল ফেডারেল রিজার্ভের ইতিহাসে সবচেয়ে কম। সুদের হার বেড়ে গেলে সাধারণত বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি ঝুঁকি নিতে চান না।
সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের মূল গ্রাহক ছিল প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন স্টার্টআপ, অর্থাৎ অনন্য একটি সেবা বা পণ্য নিয়ে একটি ব্যবসা, যা একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় আছে। ফলে সুদের হার বেড়ে গেলে এ ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
নগদ অর্থের সংকট
সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পর অনেক স্টার্টআপ শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে পারেনি। ব্যক্তি খাত থেকে অর্থ নেওয়াও তাদের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে তাদের নগদ অর্থের চাহিদা পূরণ করা শুরু করে।
এই সপ্তাহে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংককে তাদের গ্রাহকদের নগদ অর্থ উত্তোলনের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন পথ খুঁজতে ব্যস্ত থাকতে হয়।
লোকসানে বন্ড বিক্রি
দায় মেটাতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংককে বুধবার বড় অঙ্কের অর্থ জোগাড় করতে হয়েছে। এই অর্থ তারা জোগাড় করেছে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার মূল্যের বন্ড বিক্রি করে, যেসব বন্ডের বেশির ভাগ ছিল ইউএস ট্রেজারি বন্ড।
এই বন্ডে তারা সুদ পাচ্ছিল গড়ে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যদিও ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের বর্তমান সুদহার কমবেশি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এ কারণে এসভিবিকে ১৮০ কোটি ডলার লোকসানে পড়তে হয়। এই ঘাটতি পূরণ করতে তার পুঁজি বাড়ানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
শেয়ার বিক্রির ঘোষণা
তহবিলের ঘাটতি মেটাতে এসভিবি বৃহস্পতিবার জানায় যে তারা ২২৫ কোটি ডলারের সাধারণ সম্পদ বিক্রি করবে। ওই দিন তাদের শেয়ারের দাম ৬০ শতাংশ পড়ে যায়।
বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে যে আমানতকারীদের অর্থ উত্তোলন করার কারণে এসভিবিকে হয়তো আরও বেশি পরিমাণে পুঁজি সংগ্রহ করতে হবে।
শেয়ার বিক্রিতে ধস
এসভিবির অনেক গ্রাহক কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়। যারা এই পরামর্শ দিয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিল পিটার থিয়েলের ফিউচার ফান্ড। এ বিষয়ে রয়টার্স তাদের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল।
এই ঘটনা জেনারেল আটলান্টিকের মতো বিনিয়োগকারীকে ভয় পাইয়ে দেয় যে এসভিবি শেয়ার বিক্রি করতে চলেছে। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার দিন শেষে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পুঁজি সংগ্রহের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
রিসিভারের অধীনে এসভিবি
শুক্রবারে এসভিবি চেষ্টা করে বিকল্প পথে তহবিল সংগ্রহ করতে। এমনকি কোম্পানিটি বিক্রি করারও চেষ্টা চালায় তারা। কিন্তু দিনের শেষে ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি) ঘোষণা করে যে এসভিবির কার্যক্রম বন্ধ করছে এবং এটিকে রিসিভারের অধীনে দেওয়া হচ্ছে।
এফডিআইসি আরও জানায় যে তারা এসভিবির সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করবে এবং যাদের আমানতের বিমা করা নেই, তাদের ভবিষ্যতে লভ্যাংশ দেওয়া হতে পারে।