ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যশোরে জনতা ব্যাংকের একটি শাখায় লকার ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ব্যাংকে ছোট ও বড় দুই ধরনের লকার ভাড়া নেওয়া যায়। ছোট লকারের বার্ষিক ভাড়া ২ হাজার ৩০০ এবং বড় লকারের ৪ হাজার ৬০০। লকার খোলার জন্য ব্যাংক ও বরাদ্দ নেওয়া ব্যক্তির কাছে দুটি চাবি থাকে। লকারে দুই দফা তালা থাকে। লকার খুলতে হলে দুই পক্ষের দুটি চাবিই তালায় প্রবেশ করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ ইচ্ছে করলেই লকার খুলতে পারবেন না।
কিন্তু গতকাল লকার খোলা নিয়ে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। লকার বরাদ্দ নেওয়া রাজীব রায়ের চাবি ছাড়াই ব্যাংকের এজিএম রত্না চক্রবর্তী একটি চাবি দিয়েই লকার খুলে ফেলেন। যে কারণে ব্যাংকের লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন লকার ভাড়া নেওয়া রাজীব রায়।
রাজীব রায় বলেন, ‘ভুল করে আমার লকার খুলে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, আমার মায়ের লকারের চেয়ে আমার লকার তিন গুণ বড়। লকার দুটির অবস্থানও দুই প্রান্তে। তা ছাড়া আমার চাবি ছাড়াই ব্যাংকের একটি চাবি দিয়ে লকার খোলা গেলে ওই লকারের নিরাপত্তা কোথায়? গতকাল রাতে তিনি বলেছিলেন, ‘ওই লকারে আমার ৩০০ থেকে ৪০০ ভরি সোনা ছিল। আমি এখন বাইরে আছি। যশোরে ফিরে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
মামলার বিষয়ে রাজীব বলেন, ‘আজ ৭ মার্চ। রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নিয়ে আমরা সবাই ব্যস্ত। লকারের মালামাল মিলিয়ে দেখার সময় এখনো পাইনি। তা ছাড়া আমার লকারের চাবি ঢাকায় আমার স্ত্রীর কাছে আছে। সেটা আনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরপর পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
একটি চাবি দিয়ে লকার খোলা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে ব্যাংকের খুলনা বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক অরুণ প্রকাশ বিশ্বাস বলেন, লকারের তালায় কোনো সমস্যা না থাকলে একটা চাবি দিয়ে লকার খোলা সম্ভব নয়।
ব্যাংক ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছেলের লকার খুলে ফেলার পর সংসদ সদস্য লকারের নিরাপত্তা নেই দাবি করে গচ্ছিত মালামাল নিজের জিম্মায় নিতে চান। তখন ব্যাংকের এজিএম ইমরান হোসেন লিখিত দেওয়ার কথা বলেন। তখন সংসদ সদস্য খাতায় স্বাক্ষর করে নিতে বলেন। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তারা গড়িমসি করেন। এতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় সংসদ সদস্য উত্তেজিত হয়ে ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা ইমরান হোসেনকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে যান। এ সময় ব্যাংকে হইচই পড়ে যায়। এর মধ্যে ব্যাংকে পুলিশ গিয়ে হাজির হয়। পরে লকারের মালিক রাজীব রায়ের মুঠোফোনে মৌখিক সম্মতিতে লকারের মালামাল সংসদ সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়।
তবে সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় ব্যাংক কর্মকর্তাকে ধাক্কার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, পাকিস্তান আমল থেকেই জনতা ব্যাংকে তাঁদের পরিবারের নামে লকার ভাড়া নেওয়া। লকার খুলতে দুটি চাবি লাগে। একটা তাঁদের কাছে, অন্যটি ব্যাংকের কাছে থাকে। কিন্তু চাবি ছাড়াই ছেলের লকার ব্যাংকের কর্মকর্তা খুললেন কীভাবে? লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করে মালামাল নিতে চাইলে লিখিত দিতে বলেন। খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিতে বললে তাঁরা সম্মতি না দিয়ে আধা ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। তখন তিনি রাগ করে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে আসেন। তিনি ব্যাংকের কাউকে ধাক্কা দেননি।
এদিকে সংসদ সদস্য ও ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রাথমিক তদন্ত করতে যশোরে এসেছেন খুলনা বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক অরুণ প্রকাশ বিশ্বাস। আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি যশোরে আসেন।
মহাব্যবস্থাপক অরুণ প্রকাশ বিশ্বাস বলেন, ‘ঢাকার হেড অফিস থেকে আমাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যশোরের প্রধান শাখায় গিয়ে উদ্ভূত ঘটনা জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে। এরপর চূড়ান্ত তদন্ত দল ঢাকা থেকে পাঠানো হবে। আমি আজ যশোরে এসেছি।’