পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর ৫০ কোটি টাকার পাঁচ বাড়ি!

বগুড়ায় দুদকের গণশুনানি

0
174

বগুড়া পৌরসভার সদ্যবিদায়ী নির্বাহী প্রকোশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাঁর অন্তত পাঁচটি বাড়ি আছে। এর একেকটির মূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা। তিনি ফসলি জমি কিনেছেন ৩৫ একর।

বুধবার বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে বগুড়া পৌরসভার ঠিকাদার প্রিন্স রনি এসব অভিযোগ করেন। তিনি আরও  জানান, প্রকৌশলী আবু হেনা বগুড়া পৌরসভায় ২০০৬ সাল থেকে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের বগুড়া কার্যালয়ে অভিযোগ দিলে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে এখানকার কর্মকর্তারা তাঁর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন। আর রনিকে বলেন, ‌‘আবু হেনার সঙ্গে আপস করেন, আমরা  তাঁকে বকে দেব।’ শুনানিতে ঠিকাদার রনির এ অভিযোগ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দাখিল করতে বলা হয়।

আবু হেনা এখন দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরসভায় কর্মরত। রনির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর এত সম্পদ নেই।  নিজ এলাকা ও বগুড়ায় দুটি বাড়ি এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট আছে তাঁর। এ নিয়ে দুদকে মামলা চলছে বলেও জানান তিনি।

গণশুনানির জন্য দুদকের বগুড়া কার্যালয়ে অভিযোগ পড়েছিল ৯৭টি। এর মধ্যে গতকাল মাত্র ৩৪টির গণশুনানি হয়। তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করা হয় সাতটির।

শহরের টিটু মিলনায়তনে গণগুনানিতে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিতে হয়। আমেনা বেগম নামে এক ভুক্তভোগী জানান, জমির নামজারি করতে সদরের ফাঁপোড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার শাহীন মাহমুদ তাঁর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চান।  এরই মধ্যে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।  তবুও নামজারি করে দেননি পুরো টাকা না দেওয়ার অজুহাতে।

শহরের ফুলবাড়ী এলাকার স্বপন নামে এক ইজিবাইক চালকের অভিযোগ, স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ তাঁকে অহেতুক আটক করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় মাদক মামলা দেয় তাঁর বিরুদ্ধে। বগুড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আমিনুল ফরিদ বর্তমান কাউন্সিলর তরুণ কুমার চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তিনি জাল এসএসসির সনদ দেখিয়ে ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়েছেন। তিনি জ্ঞাত আয়বর্হিভূত কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। শহরের সাতমাথায় বৈধ মদের দোকানের আড়ালে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি করেন।

জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকার আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আখতারুজ্জামান নামে শহরের চকফরিদ এলাকার এক বাসিন্দার খতিয়ান ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। তা না দেওয়ায় অন্যের নামে খতিয়ান করে দিয়েছেন। এ ছাড়া বিআরটিএ, শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শিক্ষা অফিসসহ প্রায় সরকারি সব অফিসের বিরুদ্ধেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

গণশুনানিতে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান উপস্থিত থেকে অভিযোগের বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, রাজশাহী বিভাগের পরিচালক কামরুল আহসান, জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, দুর্নীতির প্রতিরোধ কমিটি বগুড়া জেলার সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেলক হক প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.