ইবির পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কারের নির্দেশ হাইকোর্টের

0
141

কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ ছাত্রীকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১ মার্চ) এ বিষয়ে এক আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এর আগে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ অন্তত ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। ঘটনার জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইশরাত জাহানসহ কয়েকজনের দায়িত্বে চরম অবহেলা রয়েছে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের র্কমকাণ্ড উদাসীন ও দায়সারা গোছের।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় করা পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় আদালতে এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। প্রাথমিক শুনানির পর আজ এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখা হয়।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী ছাত্রীকে আগামী তিন দিনের মধ্যে যে কোনো হলে সিট বরাদ্দ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ওই ছাত্রী তার পছন্দমতো যে কোনো সিট বাছাই করতে পারবেন। একই সঙ্গে বহিষ্কার হওয়া পাঁচ ছাত্রী কোনো একামেডিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ওই নির্যাতনে জড়িত বলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তাবাসসুম নামে যে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রাখাসহ কয়েক দফা নির্দেশ দেন।

তিন সদস্যের কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপককে রাখতে বলা হয়। এ ছাড়া একই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল পৃথক প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় আদালতে দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। পরে আদালতে প্রতিবেদন দুটির অংশবিশেষ পড়ে শোনান তিনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরাসরি নির্যাতন করেন হালমিা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম ও ময়াবিয়া। তাবাসুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রতীয়মান হয়, ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিন হলের ডাইনিংয়ে ফুলপরীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের সময় ঊর্মি ও মীম ভিডিও ধারণ করে। তবে কোনো ভিডিও রের্কড পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গণরুমে উপস্থিত ছাত্রীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আল-আমিন কর্তৃক ফুলপরীকে হুমকি দেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, ফুলপরীকে র‌্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশদাতা এবং ওই পাশবিক, অমানবিক ও ন্যক্কারজনক ঘটনা সংঘটনের হুকুমদাতা পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী। ওই অমানবিক, পাশবিক, ন্যক্কারজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম, ময়াবিয়া জাহান জড়িত এবং তাদের দ্বারা ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ফুলপরীকে পাশবিক কায়দায় অমানবিকভাবে নির্যাতন করেন। ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সানজিদা চৌধুরী অন্তরা নির্দেশ দেয় প্রত্যেকে যেন ফুলপরীকে একটা করে চড় মারে। আর লিমা ফুলপরীর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং সবাই অন্তরার পা ধরতে ফুলপরীকে বাধ্য করে। এ ছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থাতেই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, ঊর্মি, ময়াবিয়াসহ অন্যরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্তা করে। এক পর্যয়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বরাবর মুচলেকা দিতে বাধ্য করে।

২০ ফেব্রুয়ারি ফুলপরীর জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার বাঁ গালে কালো দাগ দেখা গেছে উল্লেখ করে বলা হয়, এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউস টিউটর মোমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল। এ ছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতাও রয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জানতে চান, এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.