প্রেমিকার মা–বাবা হুমকি দিচ্ছেন

0
192
মিতি সানজানা

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার বা মেয়েটির বয়স কত, ই–মেইলে তা জানাননি। দুজনেই যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন, তাহলে পরিবারের লোকজন আইনগতভাবে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। মেয়েটির মা-বাবা অথবা আপনার পরিবারের সেসব সদস্য, যাঁরা আপনাদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছেন না, তাঁরা আপনার থেকে পৃথিবীটা অনেক বেশি দেখেছেন। অতএব তাঁরা হয়তোবা আপনাদের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক আসলেই কতটুকু আস্থার বা ভরসার, তা সঠিকভাবে মেয়েটির পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন। কী কারণে মেয়েটির মা-বাবা সম্পর্কটি মেনে নিচ্ছেন না, সেটা আপনি লেখেননি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রেম ও আবেগে পরিবারের অবাধ্য হয়ে বিয়ে করার পর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া–বিবাদ লেগেই থাকে। পরে বিচ্ছেদই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিজেদের সম্পর্কটা নিয়ে আগে ভাবুন।

মেয়েটির মা–বাবা আপনাকে হুমকি দিচ্ছেন, ভয় দেখাচ্ছেন। সেটার আইনগত সমাধান আপনি জানতে চেয়েছেন। কেউ কাউকে হুমকি দিলে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটি আপনাকে জানাচ্ছি, তবে আপনি যেহেতু মেয়েটিকে ভালোবাসেন, তাই তাঁর বাবা–মায়ের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকা উচিত। আইন আছে বলে সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সমীচীন নয়।

সাধারণত কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। যদি তদন্ত করে দেখা যায়, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীন অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।

কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ীও প্রতিকার চাওয়া যায়। এই ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখতে বন্ড বা মুচলেকা সম্পাদনের জন্য বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্তের নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এ মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।

আশা করি আপনি ও আপনার প্রেমিকা—দুই পরিবারের সম্মতি আদায় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং অহেতুক মামলায় নিজেদের জড়াবেন না। আপনাদের জন্য শুভকামনা।

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.