‘আমি হামিদ কত খারাপ, টের পাইবা, আমার ছেলের সাথে নির্বাচন করবা না’

0
126
লালমাই উপজেলার ভুশ্চি এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন আবদুল হামিদ। গত বৃহস্পতিবার, ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

আবদুল হামিদ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বড় ভাই। তাঁর ছেলে মোহাম্মদ কামরুল হাসান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি (সহসভাপতি)।

আগামী ১৬ মার্চ লালমাই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ নির্বাচন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাত আটটায় উপজেলার ভুশ্চি এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের এক মতবিনিময় সভায় এ হুমকি দেন আবদুল হামিদ। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ সন্ধ্যায় আবদুল হামিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

তবে তাঁর ছেলে উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ কামরুল হাসান আজ রাতে বলেন, ‘দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আত্মগোপনে আছেন। ওনাদের নির্বাচনী মাঠে না দেখে আব্বা দলীয় নেতা হিসেবে হয়তো এই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আমার জন্য মাঠে নেমেছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোদমে থাকবেন।’

এদিকে আবদুল হামিদের বক্তব্যের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। কেউ অভিযোগও করেনি। তবে যতটুকু আপনার কাছ থেকে জেনেছি, এই ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। এ ধরনের বক্তব্য তিনি দিতে পারেন না।’

লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ কামরুল হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মমিন মজুমদার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ মজুমদার।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর পরিবার নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। এ কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মমিন মজুমদার ও হারুন অর রশিদ মজুমদার মুঠোফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপনে আছেন। এই দুই প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে ছেলেকে বিনা ভোটে জয়ী করাতে চান আবদুল হামিদ।

বৃহস্পতিবারের মতবিনিময় সভায় আবদুল হামিদ দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘…এখন যাঁরা দাঁড়াইছে আমার ছেলের সাথে। কথা বুঝেন। ওনারা অনেক দায়িত্বে ছিলেন। লোটাস কামাল (অর্থমন্ত্রী) তাঁদেরকে অনেক কিছু দিয়েছেন। এ হারুনকে (মো. হারুন অর রশিদ মজুমদার) ছাড়া। হারুনকে কিছু দিছে কি না, আমি জানি না। এটা কামাল জানে, আর হারুন জানে। কিন্তু মমিনকে (আবদুল মমিন মজুমদার) অনেক কিছু, অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে। সে যা পাইছে, লালমাই উপজেলার আর মানুষ তা পায়নি। লালমাই কলেজে প্রিন্সিপাল করে দিছিল, কালাম মজুমদারে (সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম মজুমদার) চাকরি দিছে, লোটাস কামালে প্রিন্সিপাল বানাইছে। এই যে প্রিন্সিপাল অইল, ভুশ্চির কোনো ছেলেমেয়েকে সে বিনা বেতনে ফরম ফিলাপ করাইছে? দেখাইতে বলেন, পুরা লালমাই উপজেলাতে একটা ছেলে অথবা একটা মেয়েকে ফরম ফিলাপ করাইছে টাকা দিয়া বা ২০০ টাকা কমাই দিয়া—এমন নজির আছে কি না। আমি ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময় দিছি দুইজনকে যে আমার ছেলের সাথে নির্বাচন করবা না। হয় বন্ধ করো আর না হয় ২৮ তারিখ দেখা হবে রাস্তায়। আমার বয়স ৮০ বছর। আর কয় বছর বাঁইছছাম, আমার বাঁচার আর সাধ নাই।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.