রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারে ৪ জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের অনুরোধ

0
152
জাতিসংঘ, ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা দৃশ্যত তাঁর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থামিয়ে দিতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করতে ও সেলফ সেন্স

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

রশিপের (স্ব আরোপিত বিধিনিষেধ) সংস্কৃতি উৎসাহিত করতে বিচারব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বৃহত্তম সংবাদপত্র প্রথম আলোতে কর্মরত রোজিনা ইসলাম ২০২১ সালে কোভিড-১৯ অতিমারির সময় স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এবং জরুরি চিকিৎসা উপকরণ সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে প্রতিবেদন করেন। ২০২১ সালের ১৭ মে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে বিনা অনুমতিতে কোভিড-১৯-এর টিকা ক্রয়সম্পর্কিত সরকারি নথিপত্রের ছবি মুঠোফোন ব্যবহার করে তোলার দায়ে তাঁকে অভিযুক্ত ও আটক করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেসি আইন ও দণ্ডবিধির আওতায় মামলা করা হয়।

২০২২ সালের ৩ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে বলা হয়, রোজিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাত মাস পর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই আদালত পুলিশকে অভিযোগ অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। পরবর্তী শুনানি ২৪ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা, যা প্রায়ই ভিত্তিহীন এবং পরে সেসব মামলার মীমাংসা না করে ঝুলিয়ে রাখার বিপজ্জনক প্রবণতারই প্রতিফলন রোজিনার বিরুদ্ধে করা মামলার দীর্ঘসূত্রতার বৈশিষ্ট্য। তাঁদের হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো, হয়রানি করা ও চুপ করিয়ে দেওয়ার উপায় হিসেবে এটা ব্যবহার করা হয়।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থামিয়ে দিতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করতে ও সেলফ সেন্সরশিপের (স্ব আরোপিত বিধিনিষেধ) সংস্কৃতি উৎসাহিত করতে বিচারব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের প্রতি পরামর্শ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের উচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক আইনি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা। একই সঙ্গে প্রয়োজন ঔপনিবেশিক আমলের দাপ্তরিক গোপনীয়তার আইন ও সাম্প্রতিককালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করা। এ ছাড়া সরকারের উচিত, দেশের আইন ও এর প্রয়োগকে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।

স্বাধীন, সেন্সরশিপবিহীন ও অবাধ গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে এবং সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ঝুলিয়ে রাখা সব মামলা তুলে নিতে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেন, প্রায়ই জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য, হয়রানি ও সহিংসতার মুখোমুখি হতে হয় বলে নারী সাংবাদিকেরা দ্বিগুণ ঝুঁকিতে থাকেন। সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ সরকারকে যেকোনো কারিগরি পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে সব সময় প্রস্তুত আছেন জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞরা বলেন, উল্লিখিত বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.