ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় শনিবার তদন্ত শুরু হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দুই কমিটি তদন্ত কার্যক্রম চলায়। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত দুই তদন্ত কমিটি পৃথকভাবে নির্যাতিত ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত কমিটি ছাত্রীর কাছ থেকে চার পাতার লিখিত বক্তব্য নিয়েছে। ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ভুক্তভোগী। আগামীকাল সোমবার অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে বলেছে তদন্ত কমিটি।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বাবা ও এক মামাকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। এরপর প্রধান ফটক থেকে প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িতে সহকারী প্রক্টর জয়শ্রী সেন তাঁদের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নিয়ে যান। প্রথমে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হলের গঠিত তদন্ত কমিটি। এরপর দুপুর ২টার দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হলটির গণরুম দোয়েল-২ এর কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার কথা বলেন তাঁরা। এ সময় কমিটির আহ্বায়ক ড. রেবা মণ্ডল ও সদস্য ইয়াসমিন আরা সাথী উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত শেষে ড. রেবা মণ্ডল বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি। প্রশাসন থেকে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। গণরুমের মেয়েদের বক্তব্যও শোনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ডেকেছি। তদন্তের কাজে অনেকদূর এগিয়েছি।’
এদিকে এই ঘটনায় জড়িত মোট পাঁচজনের নাম প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। তাঁদের মধ্যে ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ২০২০-২১ বর্ষের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম, মাওবীয়া, একই বর্ষের আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন ঊর্মির নাম রয়েছে।
নির্যাতিত ছাত্রী বলেন, সেই রাতে ১১টার দিকে ৩০৬ নম্বর কক্ষে যান অন্তরাসহ তিনজন। এই কক্ষ থেকে তাঁকে গণরুম দোয়েল-২-এ নিয়ে যান তাঁরা। এ বিষয়ে ওই কক্ষে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন ছাত্রী বলেন, ‘ওকে যখন নিয়ে যায় তখন আমরা রুমে ছিলাম।’ তবে অন্তরা বাদে অন্যদের নাম তাঁরা প্রকাশ করতে রাজি হননি।
নির্যাতন করা গণরুমে তাঁকে ভেতরের একটি বেডে বসিয়ে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে সবাই। এরপর এলোপাতাড়ি চড়থাপ্পড় দিতে থাকে। এরপর ক্রমেই প্রহারের মাত্রা বাড়তে থাকে। এ বিষয়ে ঘটনার দিন ওই রুমে থাকা ২০২১-২১ বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, নির্যাতিত ছাত্রীর দেওয়া ঘটনার বর্ণনার সবই সত্য। তবে আমাদেরকে মুখ খুলতে নিষেধ করেছে।’
এদিকে ভুক্তভোগীর জন্য আগামীতে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, ‘বিষয়টা শুরুতে জানতে পারলে হয়তো বিভাগ থেকে দুই ছাত্রীকে ডেকে সমাধান করা যেত। এখন জাতীয় ইস্যু হয়েছে। পরে ভুক্তভোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সব সহায়তা আমরা বিভাগ থেকে দেব।’ সহপাঠীরা বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা থাকলে আমরা আমাদের বন্ধুর পাশে থাকব।’
এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মামা বলেন, ‘সমাজের লোক প্রথমে ভেবেছিল, ছেলেরাও নির্যাতনের সময় উপস্থিত ছিল। পরে আমরা বিষয়টা স্পষ্ট করেছি যে, শুধু মেয়েরা ছিল। পরিবারের অন্যরা ও সামাজিকভাবে আমরা অনেক সাপোর্ট পাচ্ছি। সবাই খোঁজ নিচ্ছেন। মানসিকভাবে সাপোর্ট দিচ্ছেন। আমরা এখনও কোনো হেয় প্রতিপন্ন হইনি।’
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে, সুষ্ঠু তদন্তের পর ন্যায়বিচার করা হবে। আমি চাই, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক- যেন এমন ঘটনা দেশে তথা বিশ্বে আর না ঘটে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম আমি ও আমার পরিবার কেউ আমরা মানতে পারি না। পরিবারের সাহসে আমি এগিয়ে যাচ্ছি। আমার হাতে লেখা, চার পাতার একটি বর্ণনা কমিটি লিখিত নিয়েছে। কমিটির তদন্তের সময় আমাকে কোনো বিব্রতকর প্রশ্ন করা হয়নি। কমিটির নিকট সঠিক বিচার প্রত্যাশা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, সারাদিন ভুক্তভোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানে যা যা করণীয়, আমরা তাই করেছি।’ এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করছি।’