তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনটি রহস্যময় বস্তুর সঙ্গে চীনা গোয়েন্দাগিরির সম্পর্ক নেই। এগুলো সম্ভবত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় সম্পৃক্ত কোনো যান। এ নিয়ে তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা।’
তবে বাইডেন সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে এখনো যদি দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করে এমন কোনো বস্তু কিংবা বেলুন উড়ে, তবে সেটাও ভূপাতিত করা হবে।
৪ ফেব্রুয়ারি এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়তে থাকা চীনা গোয়েন্দা বেলুন ধ্বংস করা হয়। বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়ে। কয়েক দিন ধরে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, চীনা গোয়েন্দা বেলুন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনার ওপর দিয়ে উড়েছে, নজরদারি করেছে। এতে একাধিক অ্যানটেনা ছিল। ছিল সৌরপ্যানেল। এ প্যানেল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে সক্ষম একাধিক সেন্সর চালানোর ক্ষমতা রাখে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, চীনা বেলুনটি ৪০টির বেশি দেশের ওপর দিয়ে উড়ে এসেছে। প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও লাতিন আমেরিকার আকাশেও চীনা বেলুন শনাক্ত হয়েছে।
বেলুনকাণ্ডের জেরে বেইজিং সফর স্থগিত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, চীনের এমন কাজ যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী কাজ।
তবে চীন বলেছে, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেলুনটি আকাশে ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে বেলুনটি ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেলুনটি চলে যাওয়ার ঘটনার জন্য বেইজিং অনুতপ্ত।
পরবর্তীকালে চীনা বেলুনটি ধ্বংস করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ১০ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার আকাশে একটি রহস্যজনক বস্তু শনাক্ত হয়। পরে মার্কিন যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে বস্তুটি ধ্বংস করা হয়।
এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কানাডার আকাশে আরেকটি রহস্যময় বস্তু শনাক্ত করা হয়। কানাডার এ এলাকা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত থেকে ১০০ মাইল দূরে অবস্থিত। পরে উভয় দেশের সিদ্ধান্তে বস্তুটি ভূপাতিত করে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তসংলগ্ন হুরন হ্রদের ওপরে আরেকটি রহস্যময় বস্তু উড়তে দেখা যায়। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে ওই বস্তুও ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রথমে চীনা গোয়েন্দা বেলুন, পরে উড়ন্ত রহস্যময় বস্তু ধ্বংসের ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়তে থাকা ও পরে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে ধ্বংস করা তিনটি রহস্যময় বস্তুর সঙ্গে চীনা গোয়েন্দাগিরির সম্পর্ক থাকার কোনো ইঙ্গিত আপাতত পাওয়া যায়নি। গবেষণাকাজে কিংবা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এগুলো ওড়ানো হয়ে থাকতে পারে।
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের চলমান উত্তেজনা বাড়তে দিতে চায় না মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ওয়েন্ডি শারমেন গত বুধবার বলেছেন, ‘ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেওয়া উচিত হবে না।’ চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতা চাই, সংঘাত নয়।’