মূল্যস্ফীতি অনুপাতে বাড়েনি মজুরি

0
193
মূল্যস্ফীতি

সরকারি হিসাবে গত তিন মাসে বাজারে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এসেছে। অন্যদিকে মজুরি কিছুটা বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি কমা এবং মজুরি বাড়ার অর্থ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকা। তবে যতটুকু সামঞ্জস্য হয়েছে, তাতে স্বস্তি পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। কারণ যে হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, সে হারে বাড়েনি মজুরি। এ দুইয়ের মাঝে ব্যবধান এখনও অনেক বড়। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। ফলে আয়-ব্যয়ের এই ব্যবধান ঘোচাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্য বলছে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মাসটিতে মজুরি সূচক বেড়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের জানুয়ারি মাসে কোনো পণ্য কিনতে যেখানে খরচ হতো ১০০ টাকা, সেখানে এ বছরের জানুয়ারিতে লেগেছে ১০৮ টাকা ৫৭ পয়সা। অথচ মাসটিতে মজুরি বেড়েছে ৭ টাকার সামান্য বেশি। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকার কেনাকাটায় দেড় টাকা ব্যয়ের জোগানের ব্যবস্থা নেই একজন শ্রমিকের। এতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।

মজুরি সূচক নির্ধারণে কম মজুরির দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কিংবা হাজিরাভিত্তিক দৈনিক আয়কে বিবেচনা করে থাকে বিবিএস। মাসিক কিংবা চুক্তিভিত্তিক আয় বিবিএসের মজুরির হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। মজুরির হার নির্ধারণে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের ৪৪টি পেশাকে বিবেচনা করা হয়।

বিবিএসের প্রতিবেদন বিশ্নেষণে দেখা যায়, জানুয়ারির আগের দুই মাসে মজুরি বাড়ার চেয়ে বেশি হারে হয়েছে মূল্যস্ম্ফীতি। নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে মূল্যস্ম্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৯৮ এবং ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। অন্যদিকে ওই দুই মাসের সার্বিক মূল্যস্ম্ফীতি ছিল ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ৭১ এবং নভেম্বরে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ এবং গবেষকরা বলছেন, মূল্যস্ম্ফীতি বেশি হলে উচ্চবিত্তের কোনো সমস্যা হয় না। উচ্চ-মধ্যবিত্তরাও মানিয়ে নিতে পারে। তবে চাপে পড়ে নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং স্বল্প আয়ের মানুষ। গবেষণা সংস্থা সানেমের এক গবেষণায় বলা হয়, নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের মোট আয়ের ৬০ শতাংশ ব্যয় করে খাদ্যপণ্য সংগ্রহের পেছনে।

সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার কম। এ অবস্থায় মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ খাদ্যপণ্যের পেছনেই তাদের আয়ের একটা বড় অংশ ব্যয় হয়। তাদের জন্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিও পর্যাপ্ত নয়। খাদ্যসহ পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতি আনতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা বাড়িয়ে দরিদ্র মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যায়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি শুল্ককেও সমন্বয় আনা যেতে পারে।

বিবিএসের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৎস্যজীবী এবং নির্মাণ শ্রমিকের অবস্থা বেশি খারাপ। জানুয়ারিতে এ দুই পেশার শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি যথাক্রমে ৪ দশমিক ৪৭ এবং ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা সার্বিক মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে কম। কৃষি শ্রমিকের মজুরিও সার্বিকের নিচে। তাদের মজুরি বেড়েছে ৭ শতাংশ। তুলনামূলক ভালো আছেন শিল্প এবং সেবা খাতের শ্রমিকরা। এ দুই খাতের মজুরি বৃদ্ধি যথাক্রমে ৯ দশমিক ৩১ এবং ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী সদস্য শাকিল আক্তার চৌধুরী বলেন, যাতায়াত, বাড়ি ভাড়া, খাদ্য কেনাসহ সব খাতেই নতুন করে খরচ বেড়েছে। সিলিন্ডারের গ্যাসের বাড়তি দামও শ্রমিকদের জন্য বড় বোঝা। অথচ মজুরি সে হারে বাড়েনি। কম আয় দিয়ে বাড়তি খরচ মেটানোর সামর্থ্য তাদের নেই। তাই সব ধরনের শ্রমজীবী মানুষের মজুরি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

আবু হেনা মুহিব

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.