দেশের বাজারে আবারও বাড়ছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। এ জন্য এই খাতের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এবার নতুন করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরেকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতারা।
ডিম ও মুরগির বাজারের অস্থিতিশীল অবস্থার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দুর্বলতার রয়েছে জানিয়ে সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য পোল্ট্রি স্ট্রোক হোল্ডারদের নিয়ে ২০১০ সালে একটি জাতীয় কমিটি করে। কিন্তু তার কোনো কার্যকারিতা নেই। এর মধ্যে পোল্ট্রি ফিড, মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মুরগির কৌশলপত্র তৈরি করার কথা। এরপর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে কৌশলপত্রটি ৩০ দিনের সময় দিয়ে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। তারা একটি মিটিংও করে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর। কিন্তু এখন পর্যন্ত কৌশলপত্র তৈরি করতে পারেনি অধিদপ্তর।
তিনি বলেন, পোল্ট্রি খাবার (ফিড), মুরগির বাচ্চা ও মেডিসিনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছু উৎপাদন করছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। আবার তারা ডিম ও মুরগিও উৎপাদন করছে। পাশাপাশি খামারিদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়েও (চুক্তিভিত্তিক) জড়িত অধিকাংশ কোম্পানি। এ কারণে তাদের দৌরাত্ম্যের সঙ্গে টিকতে পারছে না দেশের সাধারণ খামারিরা। কোম্পানিগুলো বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে।
করপোরেট কোম্পানিগুলোর মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদন এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বন্ধের দাবিও জানিয়েছে ডিলার ও সাধারণ খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ফিড ও বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অনুমতি থাকলেও তারা কোনো কোম্পানিকে তদারকি করেনি। তাই দিন দিন পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে কন্ট্রাক খামারে নেওয়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের।
সুমন হাওলাদার বলেন, দেশের প্রান্তিক খামারিরা মুরগি ও ডিমের দাম না পেয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। ১ লাখ ৬০ হাজার খামারের মধ্যে, এখন বন্ধ হয়ে ৬০ হাজারে ঠেকেছে। তারপরও সব খামারে মুরগি নেই। প্রান্তিক খামারি না থাকলে এই সেক্টর টিকবে না।
তিনি আরও বলেন, মুরগি ও ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন করপোরেট কোম্পানিগুলোর শেয়ার রয়েছে ১০ শতাংশ। তবে বাচ্চা, ফিড ও অন্যান্য উপকরণ তাদের শতভাগ দখলে। এসব উপকরণ ব্যবহার করে যখন তারা মাংস ও ডিম উৎপাদনে যাচ্ছে, তখন সাধারণ খামারিরা টিকতে পারছে না। এর মধ্যে আবার করপোরেট কোম্পানিগুলো বন্ধ হওয়া খামারে কমমূল্যে ফিড ও বাচ্চা দিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করছে। সেজন্য নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে তাদের হাতে। এটা বন্ধ করতে হবে। করপোরেট কোম্পানি পোল্ট্রি উৎপাদনে থাকতে পারবে না।
এ সময় বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড ও বাচ্চা উৎপাদন করুক। পাশাপাশি তাদের ফিড ও বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতিটি বিভাগে হ্যাচারি ও ফিড মিল যেন করে। এতে করে ফিড ও বাচ্চার দামে সিন্ডিকেট বন্ধ হবে।
বাজারে ডিম ও মুরগির দাম অস্বাভাবিক বাড়ার পেছনের কারণ উল্লেখ করে সুমন হাওলাদার জানান, গত ৫ জানুয়ারি প্রতি পিস মুরগির বাচ্চা ৯-১০ টাকা ছিল। এখন সেটা ৫৬ টাকা করেছে। প্রান্তিক খামারিদের একটি ডিম উৎপাদন খরচ ১১ দশমিক ১১ পয়সা, এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪৮ টাকা ও এক কেজি সোনালী মুরগির উৎপাদন খরচ ২৬২ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার। আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসাইন ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মনসুর রহমান।