ভ্রান্ত ও ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্ররোচণায় পড়ে র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বলে সংসদে বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১০ ডিসেম্বর (বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ) বিএনপি সুনির্দিষ্টভাবে বেছে নিয়েছিল। কারণ ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভ্রান্ত তথ্য, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্ররোচণায় পড়ে দেশের অন্যতম সফল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞার ইস্যূসহ বিভিন্ন বিষয়ে গত এক বছরে অন্তত ১৫ থেকে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। করোনার কারণে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের আগে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সরাসরি সফর হয়নি বলেও জানান তিনি। শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পরে তারা যোগাযোগ করেছেন। বিএনপি ভেবেছিলো পরবর্তী ডিসেম্বরের (২০২২) মধ্যে আরেকটা নিষেধাজ্ঞা আদায় করতে পারবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বুঝতে পেরে.. আমরাতো আওয়ামী লীগ, জনগণের কাছে থাকি। আমরা জানি আমাদের শক্তি কোথায়। সেই সঙ্গে আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতাও জানি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা শুধু মার্কিন প্রশাসন নয়, এ বিষয়গুলো নিয়ে যার যার আগ্রহ রয়েছে ওইসব জায়গাতেও তারা যেন কোনো বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। আমরা আমাদের গঠনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। বিএনপির সেই পরিকল্পনা মাঠে মারা গেছে।’
তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরের পরে বিএনপি নেতারা কোথায় লুকাবেন সেই পরিকল্পনা করেছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আজকে একটি চিঠির কপি নিয়ে এসেছি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছে চিঠি লিখেছিলেন ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি। কালকে হয়তো তারা (বিএনপি) সংবাদ সম্মেলন করে বলবে এই চিঠি সত্য নয়।’
ওই চিঠিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের মহাসচিব বলে উল্লেখ করেছে বলে দাবি করেন শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, বিএনপি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল দাবি করছে। জাপানেরতো চোখ, কান, মাথা আছে। তাদের এখানে একজন প্রতিনিধি আছে। একজন রাষ্ট্রদূত আছে। তারা ভালো মতোই জানে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি নয়।
সেই চিঠিতে বিএনপি দাবি করেছে তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিহত হয়েছে বলেও দাবি করলেও তিনি যে সামরিক আইন দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেটা চিঠিতে উল্লেখ ছিলো না বলেও দাবি করেন শাহরিয়ার। ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়েছিলো বলে চিঠিতে উল্লেখ আছে বলে দাবি করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গণজোয়ারের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিলো।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত লন্ডনে পলাতক নেতার নেতৃত্বে জনগণ রাস্তায় নামবে এটা আশা করা ভুল। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান দুজনই দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত। তাদের রাষ্ট্র মেরামতের আগে নিজেদের দুর্নীতি, অপকর্ম মেরামত করা দরকার।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি–জামায়াতের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ওই সময় তার নির্বাচনী এলাকায় ১৬ জন নিহত হয়েছিলেন। সে সময় যে নৃশংসতা হয়েছিল, তিনি এলাকায় কৈফিয়ত দিতে পারেন না। কারণ এখন পর্যন্ত একটি বিচারও শেষ হয়নি।