মার্কিন সংস্থা ইউএস শর্ট সেলার ফার্মের হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদনের প্রভাবে ভারতীয় বহুজাতিক সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়েছে।
আজ শুক্রবারও দরপতন অব্যাহত ছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন আদানির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
ভারতীয় পত্রিকা ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের স্টক জালিয়াতি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশসহ আরও কিছু কারণে বুধবারের পর আজও দেশটির শেয়ারবাজারের বড় ধরনের পতন হয়েছে। শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্স আজ ৮৭৪ পয়েন্ট খুইয়েছে। এর আগে গত বুধবার ৭৭৪ পয়েন্ট খুইয়েছিল সেনসেক্স।
আদানির জালিয়াতির খবরের বাইরে দরপতনের অন্য কারণগুলোর মধ্যে আছে- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের ইউনিয়ন বাজেট পেশ, ভারতের সরকারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধি।
হিন্ডেনবার্গ গবেষণা প্রতিবেদনকে বিদ্বেষপূর্ণ, ক্ষতিকর ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন আদানি গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহী জতীন জালুন্ধওয়ালা। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ভারতের শেয়ারবাজারে শুরু হওয়া অস্থিরতা রীতিমতো উদ্বেগজনক। আদানি গ্রুপের ক্ষতির উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ভাবছি আমরা।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আজ আদানি ট্রান্সমিশনের প্রতিটি শেয়ারের দাম দুই হাজার ৩৮.৯ রুপিতে ঠেকেছে। শেষ ৫২ সপ্তাহে আদানি ট্রান্সমিশনের প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম ছিল এক হাজার ৮১৫ রুপি।
আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ামূল্য শুক্রবার বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে ২০ শতাংশ পতনের মুখে পড়েছে। যা ২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ের পর সর্বনিম্ন। আপাতত এর প্রতিটি শেয়ারের দাম ২ হাজার ৯৩৪.৫৫ রুপিতে ঠেকেছে।
আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম ৮ দশমিক ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১০৮.৬ রুপিতে।
আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের শেয়ারমূল্য ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে গিয়েছিল। তারপর কিছুটা দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯৪.৯৫ রুপিতে।
আদানি পাওয়ারের শেয়ার পাঁচ শতাংশ পতনের মুখে পড়েছে। আপাতত প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৪৮.০৫ রুপি।
আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারের দাম প্রায় ২০ শতাংশ পতনের মুখে পড়েছে। ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে নেমে শেয়ারমূল্য দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৮৪.৪ রুপিতে।
আদানি উইলমারের শেয়ারের দাম পাঁচ শতাংশ কমে গেছে। আজ এর প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫১৭.৩ রুপিতে।
আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন সিমেন্ট কোম্পানি এসিসি ও অম্বুজা সিমেন্টের শেয়ারের দরপতন হয়েছে যথাক্রমে ৯ থেকে ১১ শতাংশ। এছাড়া এনডিটিভির শেয়ারের দামও ৫ শতাংশ কমে গেছে।
হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে?
হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দশক ধরে আদানি গোষ্ঠী তার কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে। বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী ও গৌতম আদানির ১৩ হাজার কোটি ডলার সম্পদের ১০ হাজার কোটি ডলারই অর্জিত হয়েছে গত তিন বছরে স্টক জালিয়াতির মাধ্যমে, অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই তিন বছরে তাঁর সম্পদের গড় বৃদ্ধি ৮১৯ শতাংশ।
একই সঙ্গে হিন্ডেনবার্গ হিসাবে জালিয়াতির অভিযোগও এনেছে। হিন্ডেনবার্গের দাবি, এ গবেষণা করতে গিয়ে আদানি গোষ্ঠীর সাবেক বেশ কয়েক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে তারা। সেই সঙ্গে তারা কয়েক হাজার নথি পর্যালোচনা করেছে। বিভিন্ন দেশের ওয়েবসাইটও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
এই মার্কিন সংস্থার প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, আর্থিক দিক থেকে বেশ চাপের মধ্যে আছে আদানি গ্রুপ। আদানি গ্রুপের যে সাতটি সংস্থা শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত, সেগুলোর মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাবে আছে। তাই আদানি গ্রুপ আর্থিকভাবে স্পর্শকাতর জায়গায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ফোর্বসের তথ্যমতে আদানির ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা মোট অর্থসম্পদের পরিমাণ ৯ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তালিকায় এতদিন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি। তবে সাম্প্রতিক এই ধসের পর তিনি তালিকার ৭ম স্থানে নেমে গেছেন বলে জানা গেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।