অমর একুশে বইমেলার নীতিমালা পরিপন্থী বই প্রকাশের অভিযোগে ‘আদর্শ’ প্রকাশনার স্টল বাতিলের পর এবার মেলার আয়োজন নিয়ে বাংলা একাডেমি আর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্ব আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত সোমবার সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও সচিব আবুল মনসুর বইমেলার কাজের অগগ্রতি দেখতে গিয়ে সচিব মেলার আমন্ত্রণপত্রে ও মূলমঞ্চে আয়োজক হিসাবে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের নাম যুক্ত করতে বাংলা একাডেমিকে মৌখিক নির্দেশ দিলে এ আলোচনার সূত্রপাত হয়।
বাংলা একাডেমির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বইমেলার কাজের অগ্রগতি দেখতে সংস্কৃতি মন্ত্রীর সঙ্গে সচিব এসে আমন্ত্রণপত্রে শুধু বাংলা একাডেমির লোগো কেন, এ প্রশ্ন করেন। এ সময় বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা তাঁকে (সচিব) বলেছিলেন, মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি এবং মন্ত্রণালয় এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে। তখন সচিব ক্ষেপে গিয়ে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের ধমক দেন এবং নতুন করে আমন্ত্রপত্র ছাপাতে বলেন। এ সময় তিনি আমন্ত্রণপত্র এবং মূল অনুষ্ঠান মঞ্চের ব্যানারে তা যুক্ত করতে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেন জানান এ কর্মকর্তা।’ এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এরই মধ্যে সব আমন্ত্রণপত্র ও ব্যানার ছাপা হয়ে গেছে। কিন্তু সচিবের মৌখিক নির্দেশের কারণে এখন সমস্ত্র আমন্ত্রণপত্র ও ব্যানার বাতিল করতে হবে এবং নতুন করে তা ছাপতে হবে; যদিও মেলা শুরু হতে আর এক সপ্তাহও নেই ‘
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় লেখক কুলদা রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হুমকির মুখে একুশে বইমেলা। বইমেলাটি ছিনতাই করে নিতে চাইছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বাংলা একাডেমি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে মন্ত্রণালয়ের কোনো খবরদারি বা হস্তক্ষেপ অতীতে হয়নি। এরশাদ সরকারও একাডেমির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কখনও হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু এখন হচ্ছে। কার্যত এই ধরনের হস্তক্ষেপ সচিব বা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় করতে পারে না বিধি মোতাবেক। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলা একাডেমি আইন পাস হয়। এই আইন অনুযায়ী এই ধরণের হস্তক্ষেপ সম্পুর্ণ অবৈধ।’
আয়োজক হিসেবে নতুন বিতর্ক সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর ক্ষুদেবার্তায় সমকালকে বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বইমেলার আয়োজক নয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাকি দপ্তর বা সংস্থার মতো বাংলা একাডেমিও একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের সকল কর্মকাণ্ডে মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করে থাকে।’
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘অতীতে বইমেলার আমন্ত্রণপত্রে কখনোই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নাম বা লোগো ব্যবহার করা হয়নি। সবসময় আয়োজক হিসেবে বাংলা একাডেমির নাম এবং লোগো ব্যবহার হয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি আমন্ত্রণপত্রে তাদের নাম-লোগো ব্যবহার করতে চায়, তখন বাংলা একাডেমি যে একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সেটা আর মনে হবে না।’
অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর নীতিমালায় উল্লেখ আছে, “বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’ অনুষ্ঠিত হবে এবং বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক গঠিত ‘অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটি ২০২৩’ বইমেলা পরিচালনা করবে।”