বিশ্ববাজারে দর হারাচ্ছে ডলার

0
184
ডলার

আজ সকালে ইউরোর দর শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক শূন্য ৯। অর্থাৎ এক ইউরোতে এখন ১ দশমিক শূন্য ৯ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। গত এপ্রিলে ইউরোর দর এমনই ছিল। ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দরপতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। এক ডলারে এখন মিলছে ১৩০ দশমিক ১৯ ইয়েন।

এদিকে গত সপ্তাহে ব্যাংক অব জাপানের মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে জল্পনা ছিল, তারা নীতি সুদহার বাড়াবে। তাতে ডলারের পর ১২৭ ইয়েনে নেমে এসেছিল। কিন্তু ব্যাংক অব জাপান শেষমেশ নীতি সুদহার বাড়ায়নি। এতে ডলার কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ব্যাংক অব জাপান এ বছর বিপরীতে মেরুতে চলে যাবে, তা না হলে তার মৃত্যুঘণ্টা বেজে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, কমে যায় বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান। এতে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়, কমে যায় রিজার্ভ। কমাতে হয় জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানি। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে।

ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রা কৌশল বিভাগের প্রধান রে অ্যাট্রিল রয়টার্সকে বলেন, মার্কিন ডলার এখন আর লন্ড্রির সবচেয়ে পরিষ্কার কাপড় নয়। তাঁর পূর্বাভাস, আগামী মার্চের শেষ দিকে ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান ১০০-তে নেমে আসবে এবং ইউরোর দর ১ দশমিক ১০ ডলারে উঠবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর এ বছর শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশ থাকছে না। ফেডারেল রিজার্ভও নীতি সুদহার বৃদ্ধির চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে গেছে। নীতি সুদহার হয়তো আর বড়জোর ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়তে পারে। সে জন্য মার্কিন ডলারভিত্তিক বন্ডে বিনিয়োগ আর অতটা লাভজনক হবে না। সেই চিন্তা থেকেই বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ সোনা ও বিটকয়েনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। তাঁদের এই আগ্রহের পরিবর্তন থেকেও বোঝা যায়, ডলারের তেজ এ বছর কমবে।

মুদ্রা বাজারের বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ হয়তো আগামী জুন মাস পর্যন্ত দুই দফায় ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট হারে নীতি সুদহার বাড়াবে। তাতে জুনে নীতি সুদহার ৫ শতাংশে উঠতে পারে। বছরের শেষ প্রান্তে ফেড নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট কমাতে পারে। এ অবস্থায় ডলার নিশ্চিতভাবেই আকর্ষণ হারাবে।

কেন ডলারের দর বৃদ্ধি

অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা কয়েক মাস ধরেই সারা বিশ্বকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই মন্দার আশঙ্কাতেই গত বছর মার্কিন ডলারের দর বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই সময়ে বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণমূলক নানা পদক্ষেপ মন্দার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত করছে।

মার্কিন ডলার যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তা ঘরে-বাইরে সবাই টের পাচ্ছেন। মার্কিন ডলারের শক্তি এতই যে তার যেকোনো নড়াচড়া বিশ্বের নানা প্রান্তের সব স্তরের মানুষকেই স্পর্শ করে। বিশ্বের বাজারব্যবস্থা যখন অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে, অনিশ্চয়তায় ভোগে, বিনিয়োগকারীরা তখন নিরাপদ একটা আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। গত বছর সেই বিনিয়োগ মাধ্যম ছিল ডলার। ফেডের নীতি সুদহার বৃদ্ধি তার পালে হাওয়া দিয়েছে।

এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমছে, তাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধির গতিও কমছে। ডলারভিত্তিক বন্ডের চাহিদা কমছে আর তাতেই কমছে ডলারের তেজ।

তবে এটা উন্নয়নশীল দেশের জন্য ভালো। ডলারের বিনিময় হার কমলে তাদের আমদানি ব্যয় কমবে, থাকবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.