এদিকে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে খাদ্যদ্রব্যের দামে কারসাজির অভিযোগ আনা হয়েছে।
বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কর্মকর্তারা কয়েক মাস ধরে জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাংক সরবরাহ করতে পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে বার্লিন তাতে সাড়া দেয়নি। ন্যাটোর অন্য কোনো সদস্যদেশকেও সেটি করার অনুমতি দেয়নি।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি বলেছেন, ইউক্রেনে লেপার্ড ট্যাংক পাঠানোর বিষয়ে জার্মানির অনুমতি চাইবে তাঁর দেশ। জার্মানির তৈরি উন্নত এই ট্যাংক কিয়েভকে পাঠানো নিয়ে কিয়েভের মিত্রদেশগুলোর মধ্যে টানাটানি চলছে। এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার মোরাউইকি গত সোমবার তাঁর দেশ থেকে লেপার্ড ট্যাংক কিয়েভকে দেওয়ার কথা বলেন। এ ক্ষেত্রে জার্মানি রাজি না থাকলেও তাঁরা বিষয়টি অগ্রাহ্য করবেন।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালিনা বায়েরবোক অবশ্য গত রোববারই বলেছেন, যুদ্ধে সহায়তার জন্য পোল্যান্ড লেপার্ড–২ ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে চাইলে তাঁর সরকার বাধা দেবে না।
ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলার বর্ষপূর্তি হতে চলেছে আগামী মাসে। যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীতে ইউক্রেনকে কী ধরনের বা কত যুদ্ধসরঞ্জাম সহায়তা দেওয়া হবে, তা নিয়ে পশ্চিমা মিত্ররা আলোচনা করছেন। জার্মানিতে এ আলোচনার কেন্দ্রে ছিল লেপার্ড–২ নামের বিশেষায়িত ট্যাংক কিয়েভকে দেওয়ার বিষয়টি। কিন্তু জার্মানি প্রথমে এতে সম্মত হয়নি। এখন তৃতীয় দেশের মাধ্যমে তা পাঠাতে রাজি জার্মানি।
ইউক্রেনের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে এখনো রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের বাহিনীর লড়াই চলছে। আগামী বসন্তে দুই পক্ষ আরও হামলা জোরদার করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বতর্মানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বাখমুত শহরটি ঘিরে লড়াই চলছে। সেখানে পুতিনের ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে রুশ সেনারা মিলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। গত রোববার রাশিয়া দাবি করে, ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলেও তাদের সেনারা অবস্থান মজবুত করেছে।
লেপার্ড-২ ট্যাংক হলো বিশ্বের অন্যতম প্রথম সারির যুদ্ধট্যাংক। জার্মানির তৈরি এ ট্যাংক জার্মানির সেনাবাহিনী এবং অনেক ইউরোপীয় দেশের সামরিক বাহিনী এ ট্যাংক ব্যবহার করে। ইউরোপীয় নয়, এমন দেশগুলোর মধ্য কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া এই ট্যাংক ব্যবহার করে। আফগানিস্তান, কসোভো ও সিরিয়ার সংঘাতে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত এ যুদ্ধট্যাংকের ব্যবহার দেখেছে বিশ্ববাসী।
জার্মানির অনুমোদন ছাড়া পোল্যান্ড যদি ইউক্রেনে লেপার্ড-২ ট্যাংক পাঠায়, তাহলে কী হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে আনালিনা বায়েরবোক ফ্রান্সের এলসিআই টিভিকে বলেন, ‘আপাতত এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। তবে জানতে চাইলে আমরা বাধা দেব না।’
এর আগে প্যারিসে এক সম্মেলনে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইউক্রেনে লেপার্ড-২ সরবরাহের জন্য চাপের মধ্যে রয়েছে জার্মানি। তবে শলৎজের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল প্রথাগত কারণেই সামরিক অন্তর্ভুক্তি চায় না। এ ছাড়া মস্কো এর কী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, তা নিয়েও ভাবনায় রয়েছে দলটি।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিসটোরিয়াস বলেছেন, ট্যাংক নিয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসবে বলে তিনি আশা করছেন। কিয়েভ সফররত সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে রোববার সাক্ষাতের সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্যাংক পেতে আবারও আহ্বান জানিয়েছেন। নিজের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের আরও অস্ত্র প্রয়োজন—ট্যাংক, উড়োজাহাজ, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।’
এসব অস্ত্র পেলে রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলোর পুনর্দখল নিতে পারবে বলছে ইউক্রেন। প্যারিসে সম্মেলনের পরে শলৎজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে সব অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও তা–ই করা হবে।’ একই সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাঁখো বলেন, তিনি ইউক্রেনে লেপার্ড ট্যাংক পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, জার্মানি ও অন্যান্য মিত্রদেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জার্মানির সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে রাজি হলে জার্মানি ট্যাংক পাঠানোর অনুমতি দেবে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এমওয়ান আব্রামসসহ নিজেদের ট্যাংক পাঠাতে প্রস্তুত নয়। ক্রেমলিন মুখপাত্র গত শুক্রবার বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো অতিরিক্ত ট্যাংক পাঠালে ইউক্রেনের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বরং ইউক্রেনের মানুষের জন্য এটি নতুন সমস্যা তৈরি করবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক ঘনিষ্ঠ মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে কিয়েভকে বিধ্বংসী অস্ত্র সরবরাহ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, কিয়েভকে বিধ্বংসী অস্ত্র দিলে তা যদি রাশিয়ার জন্য হুমকি বলে মনে হয়, তবে বৈশ্বিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তিনি গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার না করার পক্ষে যুক্তি দেন। রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার স্পিকার ব্যাচেস্লাভ ভোলোদিন সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সমর্থন বিশ্বকে একটি ভয়ানক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার ইউক্রেনের জন্য আরও সামরিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেন। ইইউ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, তাঁরা আরও সাড়ে ৫৪ কোটি ইউরো ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার আশা করছেন। মন্ত্রীরা ইউক্রেনের জব্দ করে রাখা ৩০০ বিলিয়ন ইউরো রিজার্ভ ইউক্রেন পুনর্গঠনে দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেন।