লবণের দামে ভারত থেকে চিনি আমদানি!

0
201
চিনি

বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানায়, ভারতের কলকাতার সৌভিক এক্সপোর্টস লিমিটেড থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি সোয়া ১৩ লাখ কেজি চিনি আমদানি করে সেতু এন্টারপ্রাইজ। প্রতি কেজি চিনি ৪৫ টাকা (টনপ্রতি ৪২৫ ডলার) দর দেখায় আমদানিকারক। বেনাপোল কাস্টম এই চিনির শুল্কায়ন করেছে কেজিপ্রতি ৪৭ টাকায় (টনপ্রতি ৪৩০ ডলার)। চিনি শুল্কায়নে রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ট্যারিফ ভ্যালু টনপ্রতি ৪৩০ ডলার। এই ট্যারিফ ভ্যালু ধরেই শুল্কায়ন করেছে বেনাপোল কাস্টম। প্রথম তিনটি চালান খালাসের পর আরও তিনটি চালান আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উঠলে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম কাস্টমসের চিনির শুল্কায়ন মূল্য অনুসরণ করে শুল্কায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে আমদানিকারক সেতু এন্টারপ্রাইজের পক্ষে পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস রাতুল ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার আবদুল লতিফ বলেন, প্রকৃত আমদানি দরই ঘোষণা করেছে সেতু এন্টারপ্রাইজ। আর যেহেতু চিনি শুল্কায়নে ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করা আছে, সে জন্য ট্যারিফ ভ্যালুর বেশি দরে শুল্কায়নের সুযোগ নেই কাস্টমসের। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া চিনির শুল্কায়ন দরে বেনাপোলে শুল্কায়ন করার উদ্যোগ নেওয়ায় বাকি তিনটি চালান খালাস করা হয়নি বলে তিনি জানান।

এবার দেখা যাক অন্য ব্যবসায়ীরা কী দরে চিনি আমদানি করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় সম্প্রতি ছয়টি চালানে পরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড ও আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। চালানভেদে এসব চিনির টনপ্রতি আমদানি মূল্য ছিল ৫৬০ থেকে ৫৭৫ ডলার। প্রতি কেজিতে দুটি প্রতিষ্ঠান শুল্ক–কর দিয়েছে ৪২-৪৩ টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের ইনভয়েস ভ্যালু বা কেনা দর ট্যারিফ ভ্যালুর চেয়ে বেশি হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টমসও ইনভয়েস ভ্যালু দরে শুল্কায়ন করেছে। সরকারও রাজস্ব বেশি পেয়েছে। আবার ভারত থেকে কাছাকাছি সময়ে আমদানি করা কাঁচা চিনির দরও সেতু এন্টারপ্রাইজের চেয়ে বেশি। সর্বশেষ ভারত থেকে টনপ্রতি ৪৭০ ডলার দরে আমদানি হয়েছে কাঁচা চিনি।

অন্যদের তুলনায় কম দরের কারণে চিনি আমদানিতে দুটি ঘটনা ঘটেছে। এক. অন্য আমদানিকারকের তুলনায় প্রথম তিনটি চালানে অন্তত ৭৯ লাখ টাকা রাজস্ব কম দিতে হয়েছে সেতু এন্টারপ্রাইজকে। দুই. অন্য আমদানিকারকের তুলনায় রাজস্ব কম দেওয়ায় চিনির বাজারে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। শুল্ক–কর পরিশোধ করে সেতু এন্টারপ্রাইজের চিনি খালাসের পর প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ৮১ টাকা। প্রাণ ও আকিজ গ্রুপের আমদানি করা প্রতি কেজি চিনিতে খরচ পড়েছে ১০৩ টাকার মতো। বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১২ টাকায়।

এবার বিশ্ববাজারের দর দেখা যাক। চিনি লেনদেনের বাজার ‘আইসিই কমোডিটি এক্সচেঞ্জে’ গত মাসের শেষ সপ্তাহে প্রতি টন সাদা চিনির দর ছিল ৫৭২ ডলার। গত ছয় বছরে চিনির দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়। এই দরের সঙ্গে জাহাজভাড়া ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ যোগ হলে দাম আরও বেশি পড়বে।

পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি কাস্টমস শুল্ক ছয় হাজার টাকা। এর সঙ্গে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে। আমদানি মূল্য কম দেখালে তাতে শুল্ক–করও কম দেওয়ার সুযোগ থাকে। আবার চিনির শুল্কায়নে ট্যারিফ ভ্যালু (শুল্কায়নে নির্ধারিত মূল্য) থাকায় সেই সুযোগ নিয়েছে সেতু এন্টারপ্রাইজ।

রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, সেতু এন্টারপ্রাইজ মূলত চাল, গম ও ভুট্টা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। রপ্তানিকারক কলকাতার সৌভিক এক্সপোর্টস মূলত বাংলাদেশে তুলা রপ্তানি করে। তারাও প্রথমবার চিনি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে, সেতু এন্টারপ্রাইজের কাছে।

এ বিষয়ে জানতে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আবদুল হাকিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে বেনাপোল কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা গতকাল মুঠোফোনে  বলেন, প্রথম তিনটি চালান ট্যারিফ ভ্যালুতে শুল্কায়ন হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অন্য আমদানিকারকদের শুল্কায়ন দর অনুসরণ করে পরের তিনটি চালান ৫৭০ ডলারে শুল্কায়ন হয়েছে। চালান তিনটি আমদানিকারক এখনো খালাস নেয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.