আওয়ামী লীগের সম্মেলনে থাকছে না নতুন চমক

0
176
আগামীকাল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’- এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের জাতীয় সম্মেলন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে এবারের জাতীয় সম্মেলন সাদামাটাভাবে আয়োজিত হচ্ছে। নেতৃত্বেও থাকছে না নতুন কোনো চমক। বরাবর দু’দিন ধরে আয়োজিত হলেও, এবার এক দিনেই শেষ করা হবে সম্মেলন।

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। কিছুটা সময় নিয়ে পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের সম্মেলনে যে কমিটি হবে, এখানে তেমন পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সারাদেশ থেকে সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর ও সমসংখ্যক ডেলিগেটসহ আমন্ত্রিত অতিথি ও ৫০ হাজার নেতাকর্মী মিলিয়ে লক্ষাধিক লোক সম্মেলনে যোগ দেবেন। তবে এবার বিদেশি কোনো অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাবে না আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এ ছাড়া বরাবরের মতো বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা আমন্ত্রণ পাবেন।

জাতীয় সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিসহ ১১টি উপকমিটির নেতারা। এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন তাঁরা। দফায় দফায় প্রস্তুতি বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের সংযোজন, বিয়োজন ও পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষ পর্যায়ে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপর নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বাই ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মূল সম্মেলন মঞ্চের উচ্চতা রাখা হয়েছে সাত ফুট। সাংস্কৃৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা মঞ্চ। মঞ্চ ও সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে খুব একটা সাজসজ্জা থাকছে না।

গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন মঞ্চ ও সাজসজ্জাসহ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি কাজ পরিদর্শন করেছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে দলীয় সভাপতির জন্য বরাদ্দ (কো-অপ্ট) ১০০ কাউন্সিলর অনুমোদন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার এই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে

রাত ১০টা পর্যন্ত চলা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। শনিবার জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে কাউন্সিল অধিবেশন শুরুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের এই বৈঠক মুলতবি থাকবে। এর মধ্যে প্রয়োজনে যে কোনো সময় মুলতবি বৈঠক ডাকতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

বৈঠকে ১১ উপকমিটির নেতারা তাঁদের প্রতিবেদন পেশ করেন। এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের শীর্ষপদে রদবদল আসবে না। বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনাই ফের আওয়ামী লীগ সভাপতি হচ্ছেন- এটা নিশ্চিত হয়েই আছে। আর সাধারণ সম্পাদক পদেও ওবায়দুল কাদেরই থাকার সম্ভাবনা বেশি। সেটি হলে টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া পরিবর্তন আসবে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকীয় পদগুলোতে। গত চার সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় এবারও নতুন ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের এসব পদে আনা হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

টানা ছয় বছর ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মাঝে বড় ধরনের অসুস্থতার ধকল কাটিয়ে এখন তিনি অনেকটাই স্বাভাবিক। আবারও তাঁর এ পদে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি তৃতীয়বার দলের সাধারণ সম্পাদক থাকবেন কিনা, সেটা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, আমি নিজে প্রার্থী হব না। নেত্রী চাইলে আবার দায়িত্ব দেবেন, না চাইলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, দু’বারের বেশি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার একাধিক নজির আছে দলটিতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চারবার এই দায়িত্ব পালন করেন। চার জাতীয় নেতার অন্যতম তাজউদ্দীন আহমদ তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান চারবার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক এবং সর্বশেষ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুই দফায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে, জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল গোছানোর কাজ অনেকটাই শেষ করে এনেছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান ও আগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ দেশের আট বিভাগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে ৬৮টির সম্মেলন শেষ করেছে। বাকি ১০ জেলা সম্মেলন জাতীয় সম্মেলনের পর অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় সম্মেলন ঘিরে সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন, অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্মেলনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রস্তুতিও গুছিয়ে আনছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.