র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৫ ডিসেম্বর সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বেড়ির খাল ও হরমল খালে মাছ ধরা জেলেবহর থেকে অজ্ঞাতপরিচয়ের একদল দস্যু ১১ জেলেকে অপহরণ করে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে জনমনে চাঞ্চল্য তৈরি হওয়ায় র্যাব অপহৃত জেলেদের উদ্ধার ও অপহরণকারীদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ২০ ডিসেম্বর বাগেরহাটের মোংলা থানার বিভিন্ন এলাকায় র্যাব ও কোস্টগার্ড অভিযান চালায়। অভিযানে র্যাব ও কোস্টগার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারীরা অপহৃত ১১ জন জেলেকে রেখে পালিয়ে যায়। অপহরণকারীদের ধরতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
র্যাবের দাবি অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেন আকরাম শেখ (৪২), আনিচ শেখ (২২), মো. মিলন শেখ (২৩), মো. রফিকুল ইসলাম খান (৩৫), শুকুর আলী ব্যাপারী (৩০), মো. মনির ব্যাপারী (৩৬), মো. অলি শিকদার (৪৮), মো. বকতিয়ার ব্যাপারী (৩৫), হানিফ হাওলাদার (৪৮), সোহেল মল্লিক (২৮) ও আসাদুল শেখ (৩২)।
পুলিশের গতকালের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, র্যাব ও কোস্টগার্ডের অভিযান তৎপরতার কারণে দস্যুরা ওই জেলেদের ফেলে যান। জেলেরা অপহৃত হওয়ার পর থেকে র্যাবের অভিযান শুরু হয়। সেখানে অন্য কেউ অভিযান চালাচ্ছে কি না, সেটা তাঁদের জানা নেই।
দস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া জেলেদের স্বজন নাসির শেখ, সোহরাব শেখ, ফারুক খান ও শেখ মো. মারুফ বিল্লাহ বলেন, সাত দিন জিম্মি থাকার পর গতকাল রাতে মুক্তিপণের ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেয়ে ওই জেলেদের বন বিভাগের হরিণটানা টহল ফাঁড়িতে পৌঁছে দেয় দস্যুরা। জেলেরা গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ছাড়া পেয়ে হরিণটানা টহল ফাঁড়ি থেকে ট্রলারে করে গতকাল সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ কার্যালয়ে আসেন। এরপর সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের থানায় নিয়ে যায় মোংলা থানা-পুলিশ।
বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘গতকাল সকাল সাড়ে সাতটায় ওই জেলেরা নিজেরাই আমাদের চাঁদপাই রেঞ্জ কার্যালয়ে আসেন। সেখানে আমরা তাঁদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম। সেই সময় পুলিশ এসে আমাদের অফিস থেকে তাঁদের নিয়ে যায়।’
জেলেরা দস্যুদের কাছ থেকে গতকাল সকালে মুক্ত হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তাঁরা নিজের পরিবারের কাছে ফিরতে পারেননি। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অপহৃত থাকার পর মুক্তি মিললেও পরিবারের কাছে ফিরতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলেদের স্বজনেরা। আজ বিকেলে তাঁদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বাজিকরখণ্ড গ্রামের জেলে আসাদুল শেখ দস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে হেফাজতে নেয় শরণখোলা থানা-পুলিশ। তাঁর স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমাদের দেড় বছরের মেয়েটা বাবাকে দেখবে বলে কান্নাকাটি করতেছে। ওর জন্য টাকা ধার কইরা মোংলা থেকে কোর্টে আসছি। গরিব মানুষ, টাকা পাই কোথায় বলেন। ডাকাতদের থেকে ছাড়াতি টাকা দেওয়া লাগছে। এখনো বাড়ি যাইনি।’
আসাদুলের স্ত্রী-সন্তানকে আদালতে নিয়ে এসেছেন তাঁর ভগ্নিপতি মোহাম্মদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘দেখেন, এটা তো আমাদের জন্য হয়রানি। ছাড়া পেয়েও তাঁরা এখনো মুক্তি পায়নি।’
এদিকে আজ বিকেলে ওই জেলেদের আদালতে তোলা হয় বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক দিলীপ কুমার দাস। তিনি বলেন, দস্যুদের থেকে মুক্তি পাওয়া ওই জেলেদের বিকেলে বাগেরহাটের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (মোংলা) খোকন হোসেনের আদালতে তোলা হয়। প্রত্যেক জেলের কাছ থেকে আলাদা আলাদা জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। আদালত পুলিশকে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরিদর্শক দিলীপ কুমার দাস আরও বলেন, পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে ওই জেলেদের প্রত্যেককে তিনটি করে কম্বল দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে পুলিশের ভ্যানে করে বাড়িতে পৌঁছে দিতে তাঁদের আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে জেলেদের অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় বাগেরহাটের মোংলা থানায় অজ্ঞাতনামা সাত-আট জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম।