সম্প্রতি মিসরের শার্ম আল–শেখে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ–২৭–এ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে চাপ তৈরিতে বিশেষ অবদান রাখায় সালিমুল হকের নাম এ তালিকায় উঠে এসেছে। এ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও গরিব দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে একটি তহবিল (লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড) গঠনের বিষয়ে চুক্তিতে সম্মত হয় বিশ্বের দেশগুলো।
সালিমুল হক ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক। দীর্ঘ তিন দশক ধরে তিনি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন।
সালিমুল হকের সহায়তায় কপ–২৭ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত ও গরিব দেশগুলোর জন্য যে তহবিল গঠন করা হয়, তা প্রায় ৩০ বছরের জলবায়ু আন্দোলনের অন্যতম সফলতা বিবেচনা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এ তহবিল থেকে সহায়তা পাবে।
ওয়েবসাইটে ‘নেচার’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক মিশনে মা–বাবার চাকরির সুবাদে বিশ্বভ্রমণের সুযোগ পান সালিমুল হক। সেখান থেকেই পরিবেশ ও বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায়। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বেড়ে ওঠা সালিমুল হক পড়াশোনা করেছেন বায়োকেমিস্ট্রিতে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে পিএইচডি করেন তিনি। করে বাংলাদেশে এসে পরিবেশ নিয়ে কাজ শুরু করেন।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনায় সালিমুল হক সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেন গত শতকের শেষ দশক থেকে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর উপদেষ্টা। এসব দেশকে জাতিসংঘের আলোচনায় নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে সহায়তা করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।
সালিমুল হক বিশ্বের শীর্ষ জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সবগুলো জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। এ ছাড়া ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এর আগে যুক্তরাজ্য সরকারের সম্মানজনক অফিসার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন সালিমুল হক। তাঁকে সম্মানজনক উপাধি দিয়েছে যুক্তরাজ্যের নর্থামব্রিয়া ইউনিভার্সিটি, নিউক্যাসেল।
‘নেচার’ সাময়িকীর সেরা দশের তালিকায় আরও রয়েছে নাসার জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ প্রকল্পে কর্মরত জেন রিগবি, করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ উনলং কাও, মাঙ্কিপক্স নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ দিমি ওগোইনা, ভয়েস অব ইউক্রেন খ্যাত ভিতলানা ক্রাকোভাস্কা, করোনাবিসয়ক পরামর্শক রিসা ম্যাককর্কেল, গর্ভপাতের তথ্য অনুসন্ধাকারী ডায়ানা গ্রিনি ফস্টার, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, অঙ্গ প্রতিস্থাপনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং নীতি পরামর্শক অ্যারোন্দ্রা নেলসনের নাম।