নেইমার মানেই আনন্দ

0
256
নেইমার, ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই আবারও অনুশীলন করতে এসে নেইমার যেন বোঝাতে চাইলেন, কোয়ার্টার ফাইনালের প্রস্তুতিতে বিন্দুমাত্র ঘাটতি রাখতে চান না তাঁরা। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচটা ৯ ডিসেম্বর

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই আবারও অনুশীলন করতে এসে নেইমার যেন বোঝাতে চাইলেন, কোয়ার্টার ফাইনালের প্রস্তুতিতে বিন্দুমাত্র ঘাটতি রাখতে চান না তাঁরা। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচটা ৯ ডিসেম্বর
ছবি: রয়টার্স

নেইমারের চলাফেরা, কথাবার্তা, খেলা—সবকিছুতেই জীবন উপভোগ করার একটা দর্শন ফুটে ওঠে। সেই কৈশোর থেকে এমন চাপকে ছায়াসঙ্গী করে বেড়ে উঠেছেন, অথচ ‘চাপ’ শব্দটার অর্থই যেন তাঁর জানা নেই। সবকিছুতেই একটা চাপল্য।

ব্রাজিল হয়তো আরও বড় ব্যবধানেও জিততে পারত। কিন্তু ওই প্রাণের উচ্ছ্বাস, বিশ্বকাপকে রাঙিয়ে তোলা ওই উদ্‌যাপন? নেইমার না থাকলে তা এমনভাবে দেখা যেত বলে মনে হয় না। তা শুধুই তাঁর ফুটবলীয় দক্ষতার কারণে নয়। যদিও সেটাই নেইমারকে নেইমার বানিয়েছে। দুই ম্যাচ বাইরে থাকার পর মাঠে ফিরেই ম্যাচসেরার স্বীকৃতিও সে কারণেই। তবে ব্রাজিলের এই দলে নেইমারের ভূমিকা আরও অনেক বেশি বিস্তৃত। সাধারণ দর্শকের চোখে যা অদৃশ্যই থেকে যায়। কোচ তিতের ভাষায় নেইমার এই দলকে যা দেন, সেটিকে বলে, ‘টেকনিক্যাল লিডারশিপ।’

নেইমার নিজে খেলেন, অন্যদের খেলান। তিতে তাই সব সময়ই নেইমারের যে পারফরম্যান্স বাকি সবাই চোখে দেখে, তার সঙ্গে আরও কিছু পয়েন্ট যোগ করে দেন। নেইমার অন্যদের খেলা আরও ভালো করে দেন। সেটাও নেইমারীয় ধরনে। ফুটবল খেলাটা যে শেষ পর্যন্ত একটা খেলাই, পেশাদার ফুটবলের প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও তা যে মনের আনন্দে খেলা যায়, নেইমার ছাড়া বর্তমান ফুটবলে আর কে তা এভাবে প্রমাণ করতে পারেন! তুলনা খুঁজতে গেলে ব্রাজিল দলেই নেইমারের এক পূর্বসূরির কাছে ফিরে যেতে হয়। রোনালদিনিও!

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন নেইমার

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন নেইমার
ছবি: রয়টার্স

নেইমারীয় ধরনের কথা বলছিলাম। ম্যাচের আগে ওয়ার্মআপের সময় থেকেই যেটির শুরু। নেইমার যেন প্রথম থেকেই একটা বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাইলেন। খেলাটা উপভোগ করার জিনিস, উদ্‌যাপন করার। আসুন, সবাই মিলে উদ্‌যাপন করি। ওয়ার্মআপ করতে নামলেন হাসিমুখে গ্যালারির দিকে হাত নাড়তে নাড়তে, ফেরার সময়ও তা-ই। তা উদ্‌যাপন নেইমার করলেন বটে। রেফারিকে ব্যবহার করে দুই দক্ষিণ কোরিয়ান খেলোয়াড়কে ধোঁকা দিলেন একবার, বল নিয়ে আরও কত রকম কারিকুরি! নেইমারের চলাফেরা, কথাবার্তা, খেলা—সবকিছুতেই জীবন উপভোগ করার একটা দর্শন ফুটে ওঠে। সেই কৈশোর থেকে এমন চাপকে ছায়াসঙ্গী করে বেড়ে উঠেছেন, অথচ ‘চাপ’ শব্দটার অর্থই যেন তাঁর জানা নেই। সবকিছুতেই একটা চাপল্য। যেন কোনো সুপারস্টার নন। নেইমার বাড়ির পাশের সেই দুষ্টু ছেলেটা, যার সঙ্গে আমাদের সবারই পরিচয় আছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে যে পেনাল্টিটা নিলেন, নিশ্চয়ই তা মনে আছে। দেখে থাকলে তো তা ভোলা সম্ভব নয়। সেই পেনাল্টিতেও যেন মিশে থাকল দুষ্টুমি।

মাঠে নেইমার এমনই

মাঠে নেইমার এমনই
ছবি: রয়টার্স

আর গোলের পর ব্রাজিলের ওই উদ্‌যাপন! সেটির মধ্যমণিও তো নেইমারই। পেনাল্টিতে গোল করার পর হঠাৎই কিছুক্ষণ মাঠ থেকে উধাও। ব্রাজিলের ম্যাচে মিডিয়া ট্রিবিউন ভরা থাকে ধারাভাষ্যকারে। তারা নেইমারকে খুঁজে হয়রান। কিছুক্ষণ পর আবিষ্কৃত হলো, নেইমার গোলটা উৎসর্গ করতে ছুটে গেছেন চোটের কারণে এই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া অ্যালেক্স তেলেসের কাছে। যিনি গ্যালারিতে বসে ছিলেন, বিশ্বকাপ মিস করা নিয়ে ইনস্টাগ্রামে আবেগময় এক পোস্ট দিয়েছেন। ম্যাচের মধ্যেই তেলেসকে এভাবে স্মরণ করাটা থেকে নেইমারকে বুঝে নিতে পারেন। এই ব্রাজিলকেও। এই দলের সবাই একে অপরের তরে। বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকদের বড় একটা সময় কাটে দলের মধ্যে অন্তর্কলহ নিয়ে নিউজ করে। এর সঙ্গে ওর লাগালাগি, এর সঙ্গে ওর কথা বন্ধ—এবার এ–জাতীয় খবরের খুব আকাল যাচ্ছে বলে আফসোস করতে শুনলাম একাধিক ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিককে।

রিচার্লিসনের ওই গোলের পর তিতের নাচ থেকেও বুঝে নেওয়া যায় ব্রাজিল দলের অন্দরমহল। ম্যাচের পর তিতে একটু লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলেছেন, ‘আমি তো নাচ তেমন পারি না। তারপরও একটু চেষ্টা করলাম আরকি!’

বিশ্বকাপ শেষ হতে হতে তিতেও হয়তো নাচ শিখে ফেলবেন। নাচার সুযোগ তো আরও পাবেন বলেই মনে হচ্ছে। নেইমার তো আছেন।

উৎপল শুভ্র

কাতার থেকে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.