অনুষ্ঠানে ২০২২ সালের আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার বিজয়ী ছয় উদ্যোক্তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ সময় তিনি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে এই পুরস্কার আয়োজনের জন্য প্রথম আলো ও আইডিএলসিকে ধন্যবাদ জানান।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইডিএলসি ফিন্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম জামাল উদ্দিন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর ডিজিটাল রূপান্তর ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান।
অনুষ্ঠানে এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংকগুলো খুব বেশি উৎসাহী নয় বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনার সময় এসএমই খাতের জন্য যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল, সেটা পুরোপুরি ব্যবহার করা যায়নি। ব্যাংকগুলো বড়দের ঋণ দিতে যত আগ্রহী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ততটা আগ্রহী নয়।
অনুষ্ঠানে সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখার প্রত্যাশার কথা জানান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়ে অনেক কথা হয়, তর্কবিতর্ক হয়। তবে আমাদের একটাই লক্ষ্য—আমরা সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।’ মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা আপনাদের সফলতার গল্পগুলো বলতে চাই।
উদ্যোক্তাদের নিয়ে প্রকাশ করা ছোট ছোট সংবাদ সমাজে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। বাংলাদেশের জয়যাত্রায় আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।’ এ ক্ষেত্রে পাঠকেরাই প্রথম আলোর প্রধান শক্তি বলে মন্তব্য করেন মতিউর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে আইডিএলসি ফিন্যান্সের এমডি ও সিইও এম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এসএমই খাতের বিশেষ দিক হলো, এই খাত বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর খুব একটা নির্ভরশীল নয়। করোনা মহামারি, যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও এই খাত অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এ জন্য এসএমই খাতে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে অর্থায়ন করে আসছি।’
এম জামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘আইডিএলসির ৪০ শতাংশ বিনিয়োগই এসএমই খাতে। আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে উদ্যোক্তাদের জন্য এই পুরস্কারের আয়োজন করেছি। উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে আগামী বছরগুলোয়ও এই পুরস্কার চালু রাখা হবে।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রধান সমস্যা এখন ট্রেড লাইসেন্স। নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে জটিলতা ছাড়াও প্রতিবছর এটি নবায়ন করতে হয়। এসব জটিলতার কারণে ট্রেড লাইসেন্স করতে উদ্যোক্তারা উৎসাহী হচ্ছেন না। ফলে বিভিন্ন সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। তাই এই প্রক্রিয়া সহজ করা দরকার।
এ বছর পুরস্কারের জন্য অনলাইন ও সরাসরি ২ হাজার ২২৯টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে ছয়টি শ্রেণিতে সাতজন উদ্যোক্তাকে খুঁজে বের করেন পাঁচ সদস্যের জুরিবোর্ড। জুরিবোর্ডে ছিলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ, বাইবিট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার ২০২১ বিজয়ী অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিক-ই-রব্বানী, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক মো. জাকের হোসেন, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গণী, এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান এবং এফএম প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০১৮ বিজয়ী মুহাম্মদ গাজী তৌহিদুর রহমান।
জুরিবোর্ডের সদস্যদের মধ্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ধরন, ট্রেড লাইসেন্স, বিনিয়োগ, টার্নওভার, কর্মসংস্থান, নতুনত্ব, পরিবেশগত ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে সেরা ছয়জনকে নির্বাচন করেছি। আজ যাঁরা পুরস্কার পেলেন, তাঁরা সঙ্গে করে অনেক বড় দায়িত্বও নিয়ে গেলেন।’