পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের কোথায় উন্নয়ন হয়েছে সেটা খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছু পাকা ভবন দেখা যায়। জুম্ম জনগণের জমি নষ্ট করে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, নিরাপত্তাসহ সামগ্রিকভাবে টেকসই উন্নয়নের জন্য ২৫ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছিল।’ ‘পার্বত চট্টগ্রামের টেকসই উন্নয়ন, সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
সোমবার ঢাকায় দি ডেইলি স্টার ভবনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপত্বি করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। বক্তব্য দেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ প্রমুখ। আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।
আলোচনা সভায় সন্তু লারমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও এই অঞ্চলের মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য ২৫ বছর আগে চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়েছিল। এই দীর্ঘ সময়ে অবহেলিত, অনগ্রসর অঞ্চলটির মানুষের ভাগ্য বদল হয়নি। দিনে দিনে বৈষম্য বেড়েছে। এই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো শাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নয়ন। বাস্তবে এসবের কোনো উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়নের নামে যা করা হয়েছে তাতে মানুষের জীবন ধ্বংস হচ্ছে।’ আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় চুক্তি বাস্তবায়ন হবে- এই স্বপ্ন আমি দেখতে পারি না। তবে তরুণ প্রজন্মকে এই স্বপ্ন অবশ্যই দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে হতাশ হওয়া যাবে না।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘দেশে প্রধানমন্ত্রীর যেসব উন্নয়ন টেকসই হবে তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অন্যতম। দীর্ঘদিনেও পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের ভূমির সমস্যা সমাধান হয়নি। তারা সংখ্যালঘু হওয়ার কারনে তাদের ভূমির প্রতি অন্যদের আকর্ষণ বেশি। পাহাড়ের উন্নয়নে প্রথমেই ভূমির সমস্যা সমাধান করতে হবে। এরপর যোগাযোগ, নৃতাত্বিক, সাংস্কৃতিক, মানবাধিকারের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। পার্বথ্যাঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি সামনে আনতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নয়নের রোডম্যাপের প্রতিশশ্রুতি আদায় করতে হবে।’
সভায় এএলআরডির শামসুল হুদা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি কোনো ব্যক্তির সঙ্গে নয়, এই চুক্তি রাষ্ট্রের সঙ্গে। রাষ্ট্র এই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না করার দায় এড়াতে পারে না। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার সমস্যা শুধু পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের নয়, এটি একটি জাতীয় সমস্যা।’ তিনি সেটেলারদেরকে সরিয়ে সমতলে পুনর্বাসন, পর্যাপ্ত জনবল, আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে আঞ্চলিক পরিষদকে কার্যকর করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের একজন নিরপেক্ষ বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন গঠন করে পাহাড়ে সহিংসতার কারণ উদঘাটন করার পরামর্শও দেন।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘দীর্ঘ সময়েও পাহাড়ে টেকসই উন্নয়ন হয়নি। নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলছে। নারীরা এখন পর্যন্ত ভূমির নিশ্চয়তা পায়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে আছে।’
অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, ‘চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করে রাষ্ট্র আদিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সরকারি আমলারা চুক্তি বাস্তবায়নের চেয়ে সরকারি আদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি।’
সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘পাহাড়ে লেগে থাকা বৈষম্য, নিরাপত্তাহীনতা, উচ্ছেদ, দখলদারিত্ব, দুর্নীতির মধ্যে উন্নয়ন খুঁজে পাওয়া যায় না। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার কথা বলা হলেও অদ্যাবদি তা গঠন করা হয়নি।’