বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ লড়বে- এমন স্বপ্ন দেখার দুঃসাহস হয়তো নেই কারও। স্বপ্ন না বুনলেও ফুটবল উন্মাদনায় সবাইকে ছাড়িয়ে লাল-সবুজের দেশ, বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রবল উৎসাহ আর আবেগে মাতামাতির খবর নিয়মিত ছাপা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের পাতায় পাতায়। সভা-সমাবেশে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠের খেলোয়াড়রাও নানা দেশের ‘সমর্থক’ হয়ে বিশ্বকাপের খেলা উপভোগ করছেন।
ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা- হাল সময়ে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত প্রশ্ন। সমর্থনে বৈপরীত্য বলে পরম বন্ধুও এখন ‘শত্রু’। দেখা যাচ্ছে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিক নেতা প্রিয় দলের সমর্থক। যেমন, অনেক আগে থেকেই মোটামুটি সবার জানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দু’জনই ব্রাজিলভক্ত।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ব-তে বাংলাদেশ, ব-তে ব্রাজিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কদিন আগেও জানিয়েছেন, সময় পেলে টিভিতে বিশ্বকাপের খেলা দেখেন। আক্ষেপ হয়, বাংলাদেশের কোনো অবস্থান নেই বলে।
আর বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ব্রাজিল সমর্থক। আগে নিয়মিত খেলা দেখতেন। এখনও সুস্থ থাকলে ব্রাজিলের খেলা দেখেন।
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও ব্রাজিলের খেলা ভালোবাসেন।
তবে অসুস্থতার কারণে এবার খেলা দেখতে পারছেন না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা; দুই দলেরই সমর্থক। তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে খেলা দেখি। চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞায় রাত জাগা হয় না। সকালে হাইলাইটস দেখি। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা- দুদলেরই সমর্থক আমি। তবে ফ্রান্সের খেলাও পছন্দ।’ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল মুখোমুখি হলে কাকে সমর্থন করবেন, তা অবশ্য জানাননি তিনি।
দুই নেত্রীর মতো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ব্রাজিল সমর্থক। তিনি জানান, তাঁর পুরো পরিবারই ব্রাজিলকে সমর্থন করে। ব্রাজিলের সঙ্গে ফুটবলের সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। তারা চোখের পলকে পাল্টে দিতে পারে খেলার গতিপথ।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ফুটবলের সমর্থক। কোন দল ভালো লাগে তা স্পষ্ট করেননি।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ব্রাজিলের একনিষ্ঠ সমর্থক। রাজনৈতিক ব্যস্ততার ফাঁকে খেলা দেখার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘আসল খেলা তো শুরু হবে নকআউট পর্বে। তখন নিয়মিতই খেলা দেখব বলে আশা করছি।’
কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও ব্রাজিল সমর্থক। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি, লেখালেখির ব্যস্ততা আর শারীরিক দুর্বলতায় রাত জেগে খেলা দেখার সুযোগ মিলছে না। নকআউট পর্ব শুরু হওয়ার পর শরীর ঠিক থাকলে ফাঁকে ফাঁকে খেলা দেখার চেষ্টা করব।’
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশের পছন্দ লাতিন ফুটবল। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা উভয় দলের সমর্থক তিনি। মাঝেমধ্যে উরুগুয়ের খেলাও পছন্দ করেন। তিনি জানান, শৈল্পিক ছন্দময় খেলা আর ঐতিহ্যের কারণে ব্রাজিল ভালো লাগে। আর ম্যারাডোনার ফুটবল জাদুর কারণে আর্জেন্টিনাও পছন্দ। রাজনৈতিক ব্যস্ততা আর রাতে খেলা হয় বলে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না। নকআউট পর্ব দেখার চেষ্টা করবেন।
আর পরশের ভাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, প্রথম পছন্দ ব্রাজিল। ছেলেবেলার নায়ক পেলে। রোনালদিনহো, রোনালদো, রবার্তো কার্লোসকে ভালো লাগে। পেলের পরই ম্যারাডোনার স্থান। মেসিকেও পছন্দ। রোনালদোকেও ভালো লাগে। আর্জেন্টিনার বিপেক্ষ ব্রাজিলকেই সমর্থন করেন। এবার ফ্রান্সও ভালো দল।
উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামও ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দু’দলেরই সমর্থক। তিনি বলেন, দু’দলেরই খেলা ভালো লাগে। খেলার প্রতি বিশেষ করে ফুটবলে আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। মিরপুরের প্যারিস রোডসহ কয়েকটি স্থানে বড় পর্দায় বিশ্বকাপ খেলা দেখানোর ব্যবস্থাও করেছি।
বিএনপির সহআন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি আর্জেন্টিনার সমর্থক। তিনি জানান, একটু-আধটু বোঝেন বলে ফুটবলই প্রিয় খেলা। ক্রিকেট তেমন বোঝেন না। খেলা রাতে হচ্ছে বলে তিনি বিশ্বকাপ তেমন একটা দেখতে পারছেন না।
জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক এখন বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক। ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিবও। তিনিও ব্রাজিলের সমর্থক। আমিনুল হক জানান, ছোটবেলা থেকেই ব্রাজিলকে সমর্থন করেন।
বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল ফুটবল সংগঠক। ছিলেন বাফুফের সহসভাপতি। তাঁর পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র। তিনি মনে করেন, ২০২৬ সালের স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী দলে পরিণত হবে।