রাজধানীর নয়াপল্টনকে টার্গেট করেই ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। যে কোনো মূল্যে স্মরণকালের বড় সমাবেশ ঘটাতে প্রতিদিনই চলছে প্রস্তুতি সভা, মতবিনিময় ও ঘরোয়া বৈঠক। বিষয়ভিত্তিক সেল গঠনসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির নেতারা।
সমাবেশে লাখ লাখ লোকসমাগম ঘটাতে মরিয়া তারা। দলটির নেতারা বলছেন, দেশের অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশে সরকারের বাধা, গণপরিবহন ধর্মঘটসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার বিষয় মাথায় রেখে ঢাকার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণায় নেওয়া হচ্ছে নানা কর্মসূচি।
জানা গেছে, ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউনের মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায় বিএনপি। দলের নেতারা বলছেন, এ সমাবেশ ঘিরে সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী হবেন নেতাকর্মী। সমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতনে এক দফা আন্দোলনের সূচনা হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১০ ডিসেম্বর সরকার পরিবর্তনের তারিখ নয়, এটি একটি কর্মসূচি। তবে এ গণসমাবেশের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার, মানবাধিকার ফিরিয়ে আনার দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি নেতারা জানান, সমাবেশ থেকে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হবে। এতে এক দফা আন্দোলনের নতুন দিকনির্দেশনা থাকবে। কয়েক লাখ লোক জড়ো করে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেওয়াই হচ্ছে এখন প্রধান লক্ষ্য। পরিস্থিতি বুঝে সরকারকে সীমিত সময়ের জন্য ‘আলটিমেটাম’ দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। নির্দিষ্ট ওই তারিখের মধ্যে তাঁদের দাবি না মানলে রাজপথে সরকার পতনের আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও থাকবে।
সমাবেশ সফল করতে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলাকে নানা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর জন্যও রয়েছে নানাবিধ দিকনির্দেশনা।
সর্বোচ্চ লোকসমাগম ঘটাতে নেওয়া হচ্ছে প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে ভার্চুয়াল বৈঠক শুরু করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন তিনি। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করার তাগিদ দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। সরকারের বিভিন্ন বাধার বিষয়টি মাথায় রেখে তাঁদের কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সমাবেশ সফল করতে সারাদেশের মহানগরের প্রতিটি মহল্লা, ওয়ার্ড ও থানায় থানায় নেতাকর্মীকে সংগঠিত করা হচ্ছে, তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সমাবেশ ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের হাইকমান্ডকে বড় শোডাউন দেখাতে মরিয়া বলে দলীয় সূত্র জানায়।
নয়াপল্টনেই অনড় বিএনপি :সমাবেশের স্থান নিয়ে এরই মধ্যে নানা টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও তাতে সাড়া দেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা আর সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথ উন্মুক্ত রাখতে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার বিষয়ে অটল রয়েছে বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল এক অনুষ্ঠানে জানান, ঢাকার সমাবেশ নিয়ে সরকার এখনও তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তাঁরা গণমাধ্যমে জানতে পেরেছেন, সরকার অন্য জায়গায় অনুমতি দিতে চায়। কিন্তু তাঁদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ হবে। এখানে অতীতেও তাঁরা অনেক বড় বড় সমাবেশ করেছেন।
ঘোষণা হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের রূপরেখা :গণসমাবেশের আগেই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার ধরন-কৌশল নির্ধারণ করবে বিএনপি। নেওয়া হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের রূপরেখা ঘোষণার প্রস্তুতি। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক দফা আন্দোলনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কৌশল রয়েছে দলটির। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর গণসমাবেশের পরপরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।