আবদুর রউফ জাপার চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ছিলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত সেপ্টেম্বরে দল থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জাপার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আবদুর রউফকে জাপার প্রার্থী করাতে বেশি তৎপর দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরেক নেতা মসিউর রহমান ও রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ। রংপুরের রাজনীতিতে মসিউর রহমানের সঙ্গে মেয়র মোস্তাফিজারের বিরোধ রয়েছে। সম্প্রতি মসিউর রহমান জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে মোস্তাফিজার শক্ত অবস্থান নেন মসিউরের বিরুদ্ধে।
এরই মধ্যে আবদুর রউফকে জাপার মেয়র প্রার্থী করাতে রওশনের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়ায়। ব্যাংককে থাকতেই বিষয়টি রওশন এরশাদের কানে যায়। ফলে তিনি আজ ঢাকায় নেমে বিমানবন্দরে প্রার্থী ঘোষণা করতে রাজি হননি। তিনি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেছেন, রংপুরে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্নেহধন্য ও তাঁর পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকেই লাঙ্গলের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আবদুর রউফকে প্রার্থী ঘোষণা না করায়, তাঁর মনোনয়নের জন্য তৎপর নেতারা হতাশ হয়ে পড়েন। আবদুর রউফও হতাশা প্রকাশ করেন।
আজ রাত পৌনে আটটার দিকে আবদুর রউফ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র কিনেছি। ম্যাডাম (রওশন) এখনো ঘোষণা করেননি, রাতে হয়তো করবেন। আপনি রাঙ্গা (মসিউর রহমান) ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন।’
মসিউর রহমানকে ফোনে যোগাযোগ করলে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে একজন জানান, ‘স্যার এখন মিটিংয়ে আছেন।’
জাপার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রওশন দেশে ফেরার পরই তাঁকে ঘিরে জাপার সাবেক ও বহিষ্কৃত নেতাদের একটি অংশের তৎপরতা শুরু হয়েছে। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের ‘নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে জাপার অভ্যন্তরীণ বিবাদ যখন দানা বাঁধছে, তখন রওশনের দেশে ফেরায় এ বিবাদ আরও বাড়বে না কমবে—তা নিয়ে দলে নানা আলোচনা চলছে।
তবে আজ বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘আমি পার্টির সব এমপি, প্রেসিডিয়াম এবং অন্যদের সঙ্গে বসব। দলে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা কাজ করব।’ জি এম কাদেরসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে এলেন না কেন, এ প্রশ্নের জবাবে রওশন বলেন, ‘সে তো চেয়ারম্যান, ব্যস্ত আছে, কাজে আছে হয়তো। অন্যরা তো এসেছে।’
রওশনকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানো নিয়েও একধরনের বিভক্তি প্রকাশ পেয়েছে। দলের চেয়ারম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অধিকাংশই বিমানবন্দরে যাননি। অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে যাওয়া না–যাওয়া নিয়ে বিপরীতমুখী তৎপরতা ছিল বলে জানা গেছে। যদিও বিমানবন্দরে জাপার কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সম্প্রতি দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক, মসিউর রহমান এবং দলের সাবেক নেতা দেলোয়ার হোসেন, এস এম এম আলমসহ আরও কিছু নেতা–কর্মীও সেখানে ছিলেন।
জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘শুনেছি, বিমানবন্দরে যেতে অনেককে ফোন দেওয়া হয়েছে। তবে আমি ফোন পাইনি। আর যাঁরা গেছেন, তাঁরা আমাকে জানিয়ে গেছেন। এর বাইরে কিছু জানি না।’
রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি এবারও কিছুদিন গুলশানে পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে থাকবেন। পরে গুলশানের বাসায় উঠবেন। এর আগে গত ২৭ জুন তিনি ব্যাংকক থেকে ঢাকায় এসে ওই হোটেলে ওঠেন। আট দিন পর আবার ব্যাংককে ফিরে যান। তখন তিনি ঢাকায় এসেছিলেন সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে। তখন তাঁকে দেশে আনতে উদ্যোগী ভূমিকা নেন জাপা থেকে বহিষ্কৃত কয়েকজন নেতা। উদ্দেশ্য ছিল রওশনকে দিয়ে জি এম কাদেরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা। তখন সে চেষ্টা ভেস্তে যায়। এখন নতুন করে রওশনকে কেন্দ্র করে জাপায় নতুন অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন নেতারা।