‘শিরোপা জয় করি বা না করি, শান্তিতে থাকতে চাই’

0
184
ব্রাজিল কোচ তিতে

বিশ্বকাপ ফুটবল আর ব্রাজিল সমার্থক হয়ে গেছে সেই কবে থেকে। ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বকাপ কল্পনাও করা যায় না। বিশ্বকাপ এলেই বরং শিরোপার দাবিদার হিসেবে সমর্থকদের মুখে মুখে থাকে সেলেকাওরা। কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হেক্সা জয়ের দাবি উঠেছে জোরেশোরে। কারণ, ব্রাজিলের তারুণ্য ও অভিজ্ঞের মিশেলে গড়া দুর্দান্ত একটি দলের সঙ্গে ডাগআউটে আছেন ভরসা করার মতো কোচ তিতে। মরুর বুকে হেক্সা শিরোপার মিশনে ব্রাজিল দলের অন্দরমহলের নানা দিক নিয়ে গার্ডিয়ানকে দেওয়া তিতের সাক্ষাৎকার পাঠকের তৃষ্ণা মেটাবে।

প্রশ্ন: গত বিশ্বকাপ থেকে এবারের আসর পর্যন্ত দলে কী ধরনের পরিবর্তন দেখছেন?

তিতে: মনোযোগের জায়গায় কীভাবে আরও বেশি ফোকাস থাকা যায়, সেটা রপ্ত করেছি। আমার একমাত্র বিশ্বকাপ (রাশিয়া) থেকেও অনেক কিছু শিখেছি। যেমন ধরুন, ২০১৮ আসরে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ ব্যবধানে ড্রয়ের ম্যাচটি। আমরা লিড নিয়েছিলাম। সুইসরা সমতায় ফেরার আগে মিরান্ডার সঙ্গে ফাউল করা হয়েছিল। রেফারি ফাউল না দেওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। আমার মাথায় যে তোলপাড় হচ্ছিল, সেটা প্রকাশ পাচ্ছিল মেজাজে। কিন্তু ব্রাজিল সবচেয়ে বড় ফুটবল দল (সমর্থক গোষ্ঠীতে); সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে, আমাকে সংযত হতে হয়েছে। তখন আমি নবিশ ও অনভিজ্ঞ ছিলাম।

প্রশ্ন: গত বিশ্বকাপ থেকে এবারের দলে কতটা পার্থক্য?

তিতে: রাশিয়া বিশ্বকাপের পর ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় উত্তরণ ঘটেছে ব্রাজিলের। গত বিশ্বকাপে ব্রাজিল ছিল শুধু নেইমারনির্ভর। কিন্তু এবার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও রাফিনহার মতো ফুটবলার রয়েছে দলে। বিশেষ করে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ভিনিসিয়ুস এতটাই পরিণত হয়েছে যে এবারের বিশ্বকাপে পারফরম্যান্সে সে নেইমারকে পেছনে ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। গত বিশ্বকাপের আগে দানি আলভেজ ও রেনাতো অগাস্টো দল থেকে ছিটকে পড়ে। আর চোটের কারণে নেইমার নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। এবারের দলটি সম্পূর্ণ আলাদা। একক কোনো খেলোয়াড়কেন্দ্রিক নয়। গত বিশ্বকাপের সময় খেলোয়াড়দের পুরোপুরি বুঝে ওঠার মতো সময় পাইনি। লম্বা সময় একসঙ্গে থাকায় এবারের জানাশোনা ভালো। কোনো খেলোয়াড়কে হারালে সেটা ভালোভাবেই সামলে নিতে পারব।

প্রশ্ন: লম্বা সময় একটি দলের সঙ্গে থাকায় কোচের কাজে কী ধরনের প্রভাব ফেলে?

তিতে: কাজের অভিজ্ঞতা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক। দুই বিশ্বকাপের মাঝে চার বছর পাওয়ায় ভালো হয়েছে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। যেমন- নেইমারের সঙ্গে আমার কথা বলার ধরন দানি আলভেজের চেয়ে আলাদা। আর দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থেকে এটা আমি শিখেছি।

প্রশ্ন: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা ব্রাজিল দ্বিধাবিভক্ত। এ প্রসঙ্গে আপনার ভাবনা কী?

তিতে: ব্রাজিলের রাজনীতি নিয়ে আমার কিছু আসে-যায় না। তবে বলসোনারো (বিদায়ী প্রেসিডেন্ট) ও লুলা ডি সিলভার (বর্তমান প্রেসিডেন্ট) নির্বাচনী উত্তাপ বিশ্বকাপ আসরে আমাদের ভালো পারফরম্যান্স করার বিষয়ে চাপ বাড়িয়েছে। আসলে গোটা বিশ্বই যদি ভেঙে পড়ে, তারপরও ফুটবলই ব্রাজিলিয়ানদের ধ্যানজ্ঞান। সে কারণে আমার ফোকাস থাকবে শুধুই ফুটবলকেন্দ্রিক; ফুটবল ভক্ত বা অন্য কিছুর দিকে নয়। আর এটা মনোনিবেশের বিষয়। সুখের বিষয়, থিয়াগো ও দানির একই ধরনের। তাঁরা যেন মানুষ নয়, প্রাণী। তাঁদের ফুটবল প্রবৃত্তি ও দূরদর্শিতা অসাধারণ। তাঁরা অসাধারণ নেতা এবং নিজেদের কাজের মাধ্যমে অন্যদের পথ দেখাতে জানে।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা?

তিতে: আমরা শিরোপা জয় করি বা না করি, শান্তিতে থাকতে চাই। এটা আমার বড় চাওয়া। অনেক ব্যাপার আছে, যেটাতে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি কাজের ক্ষেত্রে সেরাটা দিতে চাই এবং শান্তি চাই। আমি নিশ্চিত, আমি সেটা পারব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.