তানু হত্যায় এখনও মামলা হয়নি, বিএনপির চারদিনের কর্মসূচি

0
200
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল গেটে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম তানু ভূঁইয়াকে (৩৭) পরকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ দলটির নেতাদের। তারা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। দেশব্যাপী সাহসী নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ড ঘটছে, তারই ধারাবাহিকতায় নুরে আলম হত্যা বলে উল্লেখ করেন নেতারা।

এদিকে ২২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।

আজ শনিবার দুপুরে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। পরে দুপুর দুইটায় নিহত নুরে আলম তানুর বাড়ির সামনে বাসাবাটি এলাকায় প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের পুরাতন বাজার মোড় এলাকায় ২য় নামাজে জানাজা শেষে সরুই কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীর নামাজে জানাজায় অংশ নিতে জাতীয়তাবাদী দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুরাতন বাজাড় মোড়ে জমায়েত হয়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ঝটিকা মিছিল করেন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিন্দ ইসলাম অমিত, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফফর রহমান আলম, সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের খুলনা বিভাগীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ, বিএনপি নেতা শাহেদ আলী রবি, খায়রুজ্জামান শিপন, জেলা যুবদলের সভাপতি হারুন অর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লাসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল।

এর আগে দুপুর একটার দিকে মরদেহ হস্তান্তরের সময় হাসপাতাল গেটে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম তানু ভূঁইয়া

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিন্দ ইসলাম অমিত বলেন, আমরা দলের জন্য নিবেদিত এক কর্মীকে হারিয়েছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শোক জানাচ্ছি। জাতীয়তাবাদী দল আজীবন নিহত তানুর পরিবারের পাশে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের আহ্বান নিরপেক্ষ থেকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা সাহসী যোদ্ধা তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় তানুকেও হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যাতে কথা না বলতে পারে এবং নেতাকর্মীদের মাঝে ভীতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম বলেন, রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকাণ্ড। এর আগে ২০১৭ সালেও খুলনার স্যার ইকবাল রোডে তানুকে গুলি করেছিল দুর্বৃত্তরা। হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান নেতারা।

চার দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম শান্ত বলেন, হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আমরা চারদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সোমবার জেলার প্রতিটি ইউনিটে দোয়া ও কালো ব্যাজ ধারণ, মঙ্গলবার জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, তৃতীয় দিন বুধবার প্রতিটি উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং বৃহস্পতিবার দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হবে। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নিবেন।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়ক পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ চেষ্টা করছে। হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এর আগে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি পদ্মপুকুরের মোড় এলাকায় ফরিদ নামের একব্যক্তির গুলিতে নিহত হন নুরে আলম তানু ভূঁইয়া। তানু বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি এলাকার মৃত আব্দুর রউফ ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি বাগেরহাট জেলা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

অভিযুক্ত ফরিদ বাসাবাটি এলাকার টুটুল শেখের ছেলে। ফরিদের নামে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। গুলিবর্ষণকারী হিসেবে পুলিশ ও স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত ফরিদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ বলছে, ফরিদ সন্ত্রাসী। তবে স্থানীয়দের কাছে তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সাবেক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, শুক্রবার বিকেলে বাগেরহাট শহরতলির বৈটপুর এলাকার একটি মোড়ে বসে হত্যাকারীরা এই পরিকল্পনা করেন। পরে পিরোজপুরের নাজিরপুর থেকে অস্ত্র নিয়ে আসা হয়। সেই অস্ত্র দিয়েই গুলি করা হয় তানুকে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার এক নিকটাত্মীয় বলেন, তানুকে একদম কাছ থেকে গুলি করা হয়। তানু বাড়ির পাশে চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ঠিক তখনই একই এলাকার ফরিদের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে আট জন হেঁটে এসে তানুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা দুজনকে চড়-থাপ্পড় দেন। এরপর তাঁর বুকে ও পেটে গুলি করেন এবং কাছে থাকা লাঠি ও লাইট দিয়ে মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করে চলে যান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি বলেন, বাসাবাটি পদ্মপুকুর চৌরাস্তার মোড়ে তানুর সঙ্গে থাকা দুজনকে ফরিদ চড়-থাপ্পড় দিয়ে বলেন, ‘তোদের তো মারতে আসিনি, তোরা চলে যা।’ এরপর ফরিদ তাঁর কাছে থাকা পিস্তল বের করে তানুকে তিন-চারটি গুলি করেন এবং হেঁটে চলে যান।

তানু ভূঁইয়ার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা জানান, রাত নয়টার দিকে তাঁর স্বামী বাড়িতে ছিলেন। কেউ একজন এসে বাইরে থেকে তাঁকে ডাকেন। পরে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মোড়ের দিকে যান তার স্বামীকে। এর বেশ কিছু পরে তাঁরা গুলির শব্দ পান। পরিবার ও স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.