ম্যাচসেরা হওয়ার পর সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর পারফরম্যান্স এবং দলের বিষয়-আশয়ই উঠে আসার কথা। উঠেছেও। এক ফাঁকে উঠল মাহমুদউল্লাহর প্রসঙ্গও। ম্যাচ-সংশ্লিষ্ট কিছু নয়। এক সংবাদকর্মী সাকিবকে জিজ্ঞেস করলেন, মাহমুদউল্লাহ আর কত দিন বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন বলে আপনার মনে হয়?
প্রশ্নকর্তা সংবাদকর্মী নিশ্চয়ই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহয় চোখ রাখছেন। সেটি শুধু তাঁর পারফরম্যান্সে নয়, বেড়ে চলা বয়সেও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ জয়ে ১৩ বলে ১৬ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরের ম্যাচে হারলেও মাহমুদউল্লাহর ২৭ বলে ২০ রানের ইনিংসটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বাংলাদেশ শেষ দুই বলে ৬ রানের সমীকরণে ১৯.৫ ওভারে মাহমুদউল্লাহর শটটি ক্যাচ না হয়ে ছক্কা হয়ে গেলে ওই ম্যাচেও নায়ক বনে যেতেন। গতকাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ২১ বলে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন ৩৮ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। আসলে মাহমুদউল্লাহ যে পজিশনে ব্যাট করেন, সেই জায়গাটাই গুরুত্বপূর্ণ। রান তাড়ায় হয় ম্যাচ শেষ করে আসতে হয় কিংবা আগে ব্যাট করলে দলকে ভালো সংগ্রহ এনে দিতে হয়। কিন্তু কালে কালে মাহমুদউল্লাহর বয়স তো আর কম হলো না! সাকিবের কাছে প্রশ্নকর্তা তাই জানতে চাইলেন, বাংলাদেশের জন্য মাহমুদউল্লাহ আর কত দিন?
সাকিব গতকাল সম্ভবত যে প্রশ্নের উত্তর যতটুকু, শুধু সেটুকুই বলার মুডে ছিলেন। বাড়তি কোনো কথা পারতপক্ষে বলেননি। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে এই প্রশ্নের জবাবেও একই পথে হেঁটেছেন, ‘যত দিন উনি ফিট থাকেন এবং দলের জন্য পারফর্ম করবেন। আমার বিশ্বাস, মাহমুদউল্লাহ আরও অনেক দিন খেলবেন। তিনি দলের অন্যতম ফিট খেলোয়াড়। খুব ভালো ব্যাটিং করছেন, বোলিংয়েও অবদান রাখছেন।’
বাংলাদেশের ১৫৯ রান তাড়া করতে নেমে জয়ের জন্য শেষ ৮ ওভারে হাতে ৭ উইকেট রেখে ৭২ রান দরকার ছিল নেদারল্যান্ডসের। এখান থেকে রিশাদ হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান দারুণ বোলিং করেছেন বলে মনে করেন সাকিব।
এই ৮ ওভারের মধ্যে ২টি করে মোট ৪ ওভার বোলিং করেন রিশাদ ও মোস্তাফিজ। রিশাদ নিজের ২ ভারে ১৪ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এর মধ্যে এক ওভারেই নিয়েছেন ২টি উইকেট। মোস্তাফিজ তাঁর ২ ওভারে মাত্র ৪ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।
সাকিব বলেছেন, ‘(ম্যাচের) দ্বিতীয় ভাগে (নেদারল্যান্ডসের ইনিংসে) ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট একটু সহজ হয়ে এসেছে বলে মনে হয়। বোলাররা দারুণ করেছে। বিশেষ করে মোস্তাফিজ ও রিশাদ। শেষ ৮ ওভারে তারা যেভাবে বল করেছে, এই ৮ ওভারের মধ্যে তারা ৪ ওভার বোলিং করেছে। রান না দিয়ে সম্ভবত ৪-৫টি উইকেট নিয়েছে। আমার মনে হয় এটা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।’
রিশাদকে নিয়ে আলাদা করেও প্রশ্ন করা হয়। বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই একজন লেগ স্পিনার খুঁজছিল—এই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হয় একজন লেগ স্পিনার এবং ‘ইমপ্যাক্ট’ (ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া) খেলোয়াড় হিসেবে রিশাদের প্রতি কি বার্তা দেবেন? সাকিবের উত্তর, ‘খুবই ভালো করছে। নতুন হিসেবে আমার মনে হয় সে যেভাবে নিজের জাতটা চেনাচ্ছে, সেটা খুবই ভালো। তবে আমি মনে করি, এখানে সবারই অবদান আছে। বিশেষ করে পুরো বোলিং বিভাগেরই।’
গ্রুপ পর্বে সোমবার নেপালের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সুপার এইটে উঠতে এই ম্যাচটি জিততেই হবে বাংলাদেশকে। ম্যাচটি আবার বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী ঈদের দিন অনুষ্ঠিত হবে।
সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতে দেশবাসীকে ঈদের আনন্দ উপহার দিতে চান কি না? সাকিব বলেছেন, ‘নেপালের ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। জিততে পারলে আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে (সুপার এইট) যাব। আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন হবে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা মুখিয়ে আছি সামনের ম্যাচের জন্য। আশা করি, ঈদের দিনে আমরা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারব।